
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উত্তেজিত জঙ্গিপুরকে পিছনে ফেলে দিল্লী গেলেন এলাকার সাংসদ খলিলুর রহমান। এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা যা সাবেক ১৪৪ ধারা তা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামলাল পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন। এমন যখন পরিস্থিতি সেই সময় এলাকা ছেড়ে বিশেষ কাজে সাংসদ দিল্লি গেলেন কেন তা নিয়ে দলেই উঠছে প্রশ্ন।
সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য দাবি, ” পূর্ব নির্ধারিত কাজ থাকায় উনি দিল্লি গিয়েছেন। আর ঘটনা ঘটার আগেই উনি দিল্লি রওনা দিয়েছেন। ” খলিলুরকে ফোন করলে তিনি ফোন কেটে দেন। দলের জঙ্গিপুর সংগঠনের সহ সভাপতি শেখ মহম্মদ ফুরকান বলেন, ” আমি জানি উনি কলকাতাতে আছেন। কাল বুধবার জঙ্গিপুরে ফেরার কথা। ওইদিন আমাদের একটা দলীয় অনুষ্ঠানও আছে। সেখানে আমাদের একসঙ্গে থাকার কথা।” এলাকায় নেই জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনও। তিনি অবশ্য কলকাতায় আছেন বলেই জানিয়েছেন। আগামীকাল এলাকায় ফিরে সবস্তরে বৈঠক করারও কথা তাঁর।
একটু রাতে এক ভিডিও বার্তায় খলিলুর বলেন, ” আমি বিশেষ জরুরি কাজে দিল্লি এসে পৌঁছলাম। বিমানবন্দরেই জেনেছি জঙ্গিপুরের অপ্রিয় ঘটনার কথা। ওয়াকফ বিষয়ে আমরা সংসদে প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিলের বিপক্ষে ভোটও দিয়েছি। দলনেত্রী আমাদের সঙ্গে আছেন।” হাতজোড় করে ওই ভিডিওতেই তিনি এটাও বলেন ” জঙ্গীপুরবাসীর কাছে আমি বিনম্র আবেদন জানাচ্ছি আপনারা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না।” একইসঙ্গে বিক্ষুব্ধদের অভিভাবকদের প্রতি সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন তৃণমূলের এই সাংসদ।
বিজেপি’র উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি সুবল চন্দ্র মণ্ডল অবশ্য সাংসদের সমালোচনা করে বলেন, ” এরা দলেরও নয়, সমাজেরও নয়, পরিস্থিতি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেন। এলাকায় বিধায়ক ও সাংসদের যে গুরুত্ব আছে তা এরা বুঝেও বোঝেন না। এরা ক্ষেত্রবিশেষে নীরব।”
সোমবার বিকেলেই ছিল মঙ্গলবারের পূর্বাভাস। নিমতিতা স্টেশনে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন এলাকার বিক্ষুব্ধ যুবকরা। কিন্তু ওইদিন তিন ঘন্টা বিক্ষোভ দেখানোর পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধ তুলে দেয়। ওইদিনই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল প্রশাসনিক স্তরে। সেই সতর্কতা মিলিয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু ছাত্র ও যুব সংগঠনের ডাকে ওয়াকফ আইনের বিরোধীতায় বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় বিকেল পাঁচটার আশেপাশে। সেই বিক্ষোভের জেরে ধুলিয়ান বাজার, ওমরপুর মোড়ে বিশাল জমায়েত হয়। তার জেরে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পরে। পুলিশ বিক্ষোভ সরাতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ঠিক নিমতিতায় যেমন পাথর ছোড়া হয়েছিল সেই কায়দাতেই পাথর ছোড়া হয় এখানেও।
পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে। মূহুর্তে এলাকা উত্তেজিত হয়ে পরে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগানো হয় পথ চলতি গাড়িতেও। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা থেকেও বিশাল পুলিশ বাহিনী জঙ্গিপুরে যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। দু’পক্ষেরই বেশ কিছুজন আহত হয়েছেন। একটু রাতে জেলাশাসক রাজর্ষী মিত্র এক নির্দেশিকায় জানিয়েছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সুতি ও রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় সাবেক ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। স্বরাষ্ট্র দফতরের জানিয়েছে সুতি ও রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভায় ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
তবে বিক্ষোভে যে এত মানুষের ভিড় হবে তা পুলিশ আন্দাজ করতে পারেনি বলে বিজেপি ও কংগ্রেস পুলিশকে ঘটনার জন্য দোষী করেছে। বিজেপির সুবল বলেন ” পুলিশ শক্ত হাতে রাশ ধরলে জল এতদূর গড়াত না।” কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অন্যতম সদস্য অধীর চৌধুরী বলেন, ” ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ আমরা করেছি, করছি, করব। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে কোনও প্রতিবাদ যেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না সৃষ্টি করে সেই আবেদন জানাব মুর্শিদাবাদবাসীর কাছে।” ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন রাজ্যের সব রাজনৈতিক দল।