প্রশাসন চাইলে সব হয়, প্রমাণ দিল মুর্শিদাবাদ পুলিশ

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সদ্য চাকরি হারানো শিক্ষকদের ওপর লাঠি চালিয়ে রাজ্য জুড়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে কলকাতা পুলিশ। সেই ঘটনাকে সমর্থন করেননি শাসকদল তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। প্রশাসনকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংযত আচরণ করতেও বলেছেন এই ‘বিতর্কিত’ বিধায়ক। মঙ্গলবার অগ্নিগর্ভ অবস্থা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের উত্তর অংশ জঙ্গিপুর। সেক্ষেত্রেও পরিস্থিতি সামলাতে না পারার অভিযোগ তুলে সমাজমাধ্যমে একটা বড় অংশের মানুষ পুলিশের দিকেও সমালোচনার আঙুল তুলেছেন। অথচ তিনটি হেভিওয়েট কর্মসূচি সামলে ” প্রশাসন চাইলে সব হয় “, এই কথার অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ দিল মুর্শিদাবাদ পুলিশ।

উস্কানিমুলক কথার অভাব ছিল না। যার জেরে যেকোনও সময় অশান্তি লাগতেই পারত। ঘটতেই পারত যেকোনও অঘটন। কিন্তু সে সব কিছুকে দক্ষতার সঙ্গেই সামলেছেন পুলিশ কর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার আধিকারিকরা ছাড়াও পথে ছিলেন নানা স্তরের পুলিশ কর্মীরা। সব রকমভাবেই প্রস্তুত ছিল বাহিনী।

বুধবার বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল সহ প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। সেই মিছিলের জন্য পুলিশ শহরের একটা দিক বেঁধে দিয়েছিল। ওয়াইএমএ মাঠের পাশ দিয়ে সংগঠনের সদস্যরা মিছিল করে জেলা প্রশাসনিক ভবনকে ডানদিকে রেখে সোজা ব্যারাকস্কোয়ার দিয়ে তাঁদের সমাবেশস্থলে প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়। যে কোনও প্রথম সারির রাজনৈতিক দলকে টেক্কা দিতে পারার মতো ভিড় হয়েছিল মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এই সংগঠনের ডাকা এদিনের সমাবেশে।

বিজেপি’র মিছিলে পুলিশ

চাকরি ফেরতের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন লাগোয়া রবীন্দ্রসদনের পাশে ডিআই অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন সদ্য চাকরি হারানো মুর্শিদাবাদের শিক্ষকরা। সেখানেও উত্তেজনা ছিল। জেলাবিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। শিক্ষাভবনেও মজুত ছিল বড় সংখ্যক পুলিশ। শীর্ষ আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া শিক্ষকদের একটা মিছিল শহর পরিক্রমা করে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওয়াইএমএ-র পাশে খাটিকতলা দিয়ে তাদের মিছিল ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। তাতে ছন্দ নষ্ট হলেও শিক্ষকদের ‘ন্যায্য’ দাবির কথা শুনেছেন পাড়ার মানুষজনও। সেখানেও পাহারায় ছিল পুলিশ। শুধু বৈধ শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকেই নয়, এদিন শিক্ষাভবনের ডাক দিয়েছিলেন সারা বাংলা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতারাও। সেখানেও জমায়েত ছিল।

বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ের সভা থেকে যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে বাঁকা কথা বলছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতারা। তখন কাদাই এলাকায় বিজেপি’র বহরমপুর জেলা কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে দলের প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেন ” মুর্শিদাবাদকে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ” বুধবার চাকরি হারানোদের পাশে দাঁড়িয়ে দলের প্রাক্তন সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটা বড়সড় কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিজেপি। একদিকে প্রাক্তন সাংসদ তাঁর পাশে বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র সঙ্গে মিছিলে বিজেপি কর্মীদের শাসকদলকে লক্ষ্য করে উত্তেজনামূলক শ্লোগান। সেই মিছিলের অভিমুখ ঘুরিয়ে বিজেপিকে উত্তরেই আটকে রেখে পুলিশ শহরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। যদিও পুলিশের কথা না তুলে বিজেপি’র বহরমপুর সংগঠনের সভাপতিমলয় মহাজন বলেন ” এই রাজ্যে অশান্তিই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি শান্তিকামী দল। আমাদের দেখেছেন কোথাও উত্তেজনা তৈরি করতে।”

নিজেদের কর্মসূচি সেরে যে যার মতো বহরমপুর ছেড়েছেন নির্বিঘ্নে। ঠিক একইভাবে সাধারণ মানুষের চলাচলেও এদিন পুলিশ কোনও বিঘ্ন ঘটতে দেয়নি বলছিলেন বহরমপুরেরই মানুষজন। সে কথা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাকে বলতেই তিনি মুচকি হেসে বললেন ” আমাদের কাজই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। সেই জন্যই আমাদের উর্দি পড়তে হয়। তাই বলে কী কোথাও কিছু অঘটন ঘটে না। নিশ্চয় ঘটে। তবে শতাংশের বিচারে নগণ্য। আর জানেনইতো আমাদের হাতেও সবকিছু থাকে না।” এর আগে রাম নবমীর মিছিল ঘিরেও কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়নি মুর্শিদাবাদ পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights