সংবাদ প্রতিনিধি, কলকাতাঃ রাজ্যের টালামাটাল সময়ে তৃণমূলের ঘর ভাঙার শব্দ ছড়িয়ে গেল দেশে। রাজনীতি ও সাংসদ যুগপৎ দুই পদ থেকেই অব্যহতি নিলেন প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। রবিবার সমাজমাধ্যমে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠি পোস্ট করে জহর লিখলেন, ” আমি আর পারছি না। সংসদ থেকে মুক্তি চাই।” সেখানেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে জহর লিখেছেন, “রাজনীতি ছাড়ছি কিন্তু নীতি ছাড়ছি না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠির ছত্রে ছত্রে দলের সমালোচনা ঝড়ে পড়েছে প্রাক্তন আমলার কলম থেকে। একদিকে আরজিকর কান্ডের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্থ একাংশ আমলা ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সরকারের নীরবতা অন্যদিকে পঞ্চায়েতে প্রধান স্তরের তৃণমূল নেতাদের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা উভয়ের সমালোচনা করেছেন সেই চিঠিতে। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’

শুধু তাই নয় তৃণমূল বারবার আরজিকর কান্ডের বিচার চেয়ে সাধারণ মানুষের পথে নামাকে বিজেপি ও সিপিএমের কৌশল বলে দাগিয়ে দেওয়ার অক্ষম চেষ্টার সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন সাংসদ। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না। শুধু একবাক্যে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন।’’ শুধু তাই নয় তিনি আরও লিখেছেন, “আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।’’
এর আগে আর এক সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় নানাভাবে ঘটনার নিন্দা করলেও দলের নাম মুখে আনেননি। এমনকি পদ থেকে ইস্তফার কথাও বলেননি। মমতা চিনলেও এই সুখেন্দুশেখরের হাত ধরেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন জহর। ২০২২ সালে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সমালোচনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার এই সাংসদ সাংসদ সৌগত রায় তাঁকে ‘স্বার্থপর’ বলে পদ ছাড়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কিছু শুভাকাঙ্খীর ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতেই তিনি পদ ছাড়েননি বলে এদিনের চিঠিতে তাও উল্লেখ করেছেন জহর। প্রাক্তন এই আমলা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকেও চিঠি দিয়েছেন না কি শুধুই দলনেত্রীকে চিঠি দিয়ে ক্ষোভ জানালেন সে কথা অবশ্য জানা যায়নি।
তবে তাঁর এই বিস্ফোরিত চিঠি যা এই মূহুর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারকে যে বেশ কিছুটা পিছনে টেনে নিয়ে গেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।