বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরী বিভাগ পেরোলেই চোখ চলে যাবে সামনের রাস্তায়। রাস্তা জুড়ে বহরমপুরের একদল তরুণ-তরুণী লিখে রেখেছেন “জ্বলুক আগুন। উঠুক ধোঁয়া। প্রতিবাদ হোক আকাশ ছোঁয়া।” তার নিচেই বড় বড় অক্ষরে লেখা “গর্জে ওঠো । করো প্রতিবাদ” আর তার নিচে সোজা সাপ্টা কথায় ইংরেজিতে লেখা হয়েছে If you want peace. Work for justice (যদি শান্তি চাও। তবে বিচারের দাবি তোলো)

সোমবার দেশের শীর্ষ আদালতে তিলোত্তমার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। এরমধ্যেই একদিন শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। আশা ও নিরাশায় দুলছে সমাজ। বহরমপুরের জনা বিশেক এই তরুণরাও তার শরিক। ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া থেকে চিকিৎসকদের একাংশ। সার বেঁধে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন সেলিম শেখ, সেই রাস্তার দিকে যেখানে ভর সন্ধ্যায় হেঁটে গিয়ে খাবার জল বয়ে এনেছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য। বললেন, “কীভাবে ওরা কালো পিচের রাস্তাটাকে রাঙিয়ে দিল তাই দেখছিলাম।”
পরক্ষণেই কিছুটা স্বগোতোক্তির ঢঙে বললেন, ” ঠিকই তো। যদি ঘুম থেকে উঠে এই রাস্তা ধরে যেতে যেতে নজরে পরে এই আঁকা ,লেখা তাহলে সেও পড়বে। মানবিক হবে। দেখবেন এতদিন যারা বলছিল কিছুই হবে না। সেই দল বিচার চাই বলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। জয় হবেই। ওই ডাক্তারের মৃত্যুর বিচার হবেই।” বয়স কত? মেরেকেটে চল্লিশ। বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ। ঘড়িতে তখন রাত দু’টো। ওই দলেরই অন্যতম সদস্য গুঞ্জা সরকার জানালেন ” আমাদের উদ্দেশ্য রাত জেগে যে কাজ আমরা করি সেটি যেন মানুষ সকালে উঠে দেখতে পায় আর ঘুমন্ত মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়। প্রতিবাদের অনেক ভাষা হয়,আমাদের ভাষা চিত্রও লেখনী। আমাদের প্রতিবাদ চলছে ও চলবে যতক্ষন না তিলোত্তমা ন্যায়বিচার না পায়।”
অন্যসময় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ এলাকা স্বর্ণময়ী চত্বর ঘুমিয়ে পড়ে। নয়তো ঝিমোয়। অথচ কাল রাতভোর যেন চোখে ঘুম নেই স্বর্ণময়ীরও। নিস্তব্ধ। নীরব। আর কে না জানে নীরবতার ভাষা সাংঘাতিক। যা নড়িয়ে দিতে পারে স্বৈরাচারীকে। রোগীর পরিবার, হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী, রাতে টহল দেওয়া পুলিশ ক্যাম্পের মানুষজন যাঁরা এই ক’দিনে মানসিকভাবে শরীক হয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের তাঁরাও কাল সারাক্ষণ ওই পঁচিশ ছাব্বিশের তরুণ-তরুণীদের আগলে রাখলেন। এক চিকিৎসক বললেন, “আমরা ওদের ডাকিনি। আমন্ত্রণ জানাইনি। ওঁরা এসেই আমাদের প্রতিবাদের শামিল হয়েছেন। মানুষকে ডাকতে হচ্ছে না। সে নিজেই বেড়িয়ে আসছে রাস্তায়। ঘরের বন্ধ দরজা ঠেলে।”
আগামী ন’তারিখ শীর্ষ আদালতে শুনানি হবে। আজও ডক্টরস ফোরাম রাত জাগার ডাক দিয়েছে। সেই দাবি মেনে বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ের চৌতারা থুরি তিলোত্তমা চত্বর জেগে থাকবে রাতভোর কবিতায়, গানে, মিছিলে পা মিলিয়ে। আমন্ত্রিত কেউ নয়। সবাই অতিথি। সবাই প্রতিবাদী। তিলোত্তামার বিচারের দাবি সবার।