কলতান বুমেরাং হবে না তো ? প্রশ্ন শাসকের অন্দরে

Social Share

বিপ্লব ব্যানার্জী, কলকাতাঃ তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুনাল ঘোষ একটি অডিও ক্লিপ শুনিয়ে চিকিৎসকদের আন্দোলনে নাশকতার ছক কষা হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন। এমনকি শাসককে বিড়ম্বনায় ফেলতেই এই দাবি করা হচ্ছে বলেও দাবি ছিল তাঁর। সেই অডিও ভাইরালও হয় নেট দুনিয়ায়। শনিবার সকাল হতেই কুনাল উদ্ধৃত ‘ক’ মানে কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করে বিধাননগর থানার পুলিশ। বিধাননগরের ডিসি অনীশ সরকারের দাবি, ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

প্রাথমিকভাবে এই অডিও ক্লিপ কান্ডে শুক্রবার ধৃত সঞ্জীব দাস ও শনিবার ধৃত কলতান দাশগুপ্ত উভয়েই অডিও ভয়েস নিজেদের বলে দাবি করেছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পরে পুলিশ মহলেই। পরে ডিসি বলেন, সঞ্জীব স্বীকার করলেও কলতানকে এই ব্যাপারে জেরা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আলোচিত আরও তিনজন সাহেব, দাদু ও বাপ্পা-র বিষয়ে বিশদে জানতে দু’জনকে আরও হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় পুলিশ। যদিও সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ হাজারদুয়ারি। এদিকে কলতানের গ্রেফতারি নিয়ে সিপিএমের ‘ষড়যন্ত্র’-র দাবিকে কার্যত সমর্থন করেছে বিজেপিও।

একইসঙ্গে এদিন স্বাস্থ্যভবনের সামনে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ধর্না মঞ্চে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দিদি’ হিসেবে ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বলেও এদিন দাবি করেন তিনি। যদিও চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি মানা হবে কী হবে না তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ” প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কথা বলে আপনাদের দাবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। আমাকে একটু সময় দিন।” মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা মঞ্চে আসা নিয়ে সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছেন চিকিৎসকরাও। যদিও তাঁরা তাঁদের পাঁচ দফা দাবিতেই এখনও অনড়।

এই দুটি ঘটনাকে পরপর রেখে রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা দাবি করছেন, ৩৪-৩৫ দিনের মাথায় সরকার আন্দোলনকে ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের একটা অংশ সেদিনের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। যা কার্যত এককাট্টা আন্দোলনের মধ্যে যে কৌশলে সন্দেহের বীজ বপণ করে দেওয়া তা নিয়ে দ্বিমত নন রাজনীতির কারবারীরা। আবার এদিন স্নেহের গলায় চিকিৎসকদের পাশে থাকার বার্তা ও একইসঙ্গে জনপ্রিয় বাম যুব নেতার গ্রেফতারি নিয়েও রাজ্যের মানুষকে কার্যত দ্বিখন্ডীত করতে চাইলেন মমতা। যে জনতা জাস্টিস ফর আরজি করের দাবিতে অনড়। বাম যুবদের প্রথম দিন থেকে মাটি কামড়ে তিলোত্তমার বিচার চাওয়ার দাবিকে রাজনীতির পাশাপাশি প্রতিহিংসার রঙ লাগানোর চেষ্টা করলেন তিনি। এমনটাই মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম বলেছেন ” এই কুনালের রঙ্গ বাংলা দেখে নিয়েছে। কতজন কলতানকে ধরবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?” আরও বলেন, ‘‘কলতান ডিওয়াইএফআই’র অন্যতম প্রধান নেতা রাজ্যে। ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক। তাই ওকে বেছে নিয়েছে সাজানো অভিযোগ দেওয়ার জন্য।’’ বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “কলতান দাশগুপ্তের অডিয়ো ক্লিপ কুণাল ঘোষ পেলেন কী করে? তাহলে কি প্রত্যেকের ওপর এরকম নজরদারি চলছে? যে ভাবে কলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ। আমি যতটুকু ওকে চিনি, নাশকতামূলক কোনও কাজ করার ছেলে সে নয়। দলের বিধায়ক যখন প্রতিহিংসার গরম গরম কথা শুনিয়ে সংবাদ মাধ্যম গরম করেন তাঁর বেলায় দল কিছু বলে না।”

শুধু বিজেপিই নয়। কলতানের গ্রেফতারিতে মনে ‘কু’ ডাকছে বলে দাবি করেছেন শাসকদলের প্রথম সারির এক নেতাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, ” বিধায়কের গ্রেফতারির দাবি একদম ঠিক। ওই বিধায়ক ব কজি সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের অন্যায় হয়। মানুষ দেখেছে। আর দেখেছে প্রমাণ পেয়েছে বলেই তো আজ আন্দোলনের নামে প্রতিবাদ কার্যত রাজ্যটাকে অচল করে দিয়েছে। কলতানের গ্রেফতারি বুমেরাং হবে না তো?” সভয়ে প্রশ্ন তাঁর। তিনি আরও বলেন, ” বিজেপির থেকে অনেক সক্রিয়ভাবে বাম যুবরা তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে সরব। এই সময় যদি মিথ্যা মামলায় কাউকে ফাঁসানো হয় তার ফল কখনোই ভাল হতে পারে না। তখন দল বলবে না তো সময় নিয়ে তদন্ত করা উচিত ছিল ?” বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ” এসব হচ্ছে আন্দোলন ভাঙার চক্রান্ত। সমস্ত বাম কর্মীদের জেলে পুরে দিলেও এই লড়াই থামবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights