
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দুধের প্যাকেট কিনে দাম মেটাতে গিয়ে আর্য চক্রবর্তী একটা ৫০ টাকার নোট দিলেন বিক্রেতাকে। তিনি তাঁকে চারটে লজেন্স ও একটি কুড়ি টাকার নোট ধরিয়ে দিলেন। একই ঘটনা বার কয়েক ঘটেছে বহরমপুরের আর এক বাসিন্দা সুপর্ণা মন্ডলের সঙ্গেও। ওষুধের দোকানে একদিন যখন তাঁর হাতে লজেন্স ধরিয়ে দেওয়া হয়, তিনি অপেক্ষা করে অন্য আর একটি জিনিস কেনেন ওই দোকান থেকে এবং দাম মেটান লজেন্স দিয়েই। সুপর্ণার মত, ফেরত মূল্যের সমতা ফেরাতে বিক্রেতা লজেন্স দিতে পারেন, কিন্তু ক্রেতা দিলেই দিতে হয় কৈফিয়ত। সেদিন অবশ্য সুপর্ণার পাল্টা উত্তরের কোনও জবাব দিতে পারেননি ওই বিক্রেতা।
বহরমপুরের যে কোনও দোকানে এই দৃশ্য বিরল নয়, দাবি আর্যর। তিনি মানতেই চান না বাজারে খুচরোর অসুবিধা আছে। তাঁর দাবি, ” এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নেয়। এক টাকা, দু’টাকা ছেড়ে এখন পাঁচ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে ব্যাপারটা। যেন মনে হচ্ছে বাজারে লজেন্স মেটাচ্ছে খুচরোর টানাটানি। “
শহরের এক মুদি সামগ্রী বিক্রেতা অর্ণব মন্ডল বলছেন, ” এখন এক টাকা দু’টাকায় কিছুই মেলে না ওই লজেন্স ছাড়া। ক্রেতা এক বা দু ‘টাকার জিনিস একসঙ্গে অনেক কিনে নিচ্ছেন ফলে তিনি হয় দশ টাকা না হয় কুড়ি টাকার নোট দিচ্ছেন। এইভাবে দিনের শেষে গিয়ে খুচরো পয়সা আমাদের থাকছে না। তখন ক্রেতাকে ওই লজেন্স দিয়ে সমতা আনতে হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ ব্যঙ্কের দিকে। ব্যঙ্ক খুচরোর জোগান দিতে পারছে না বলেই এই অসুবিধা হচ্ছে, দাবি ওই বিক্রেতার।
আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক টাকার ছোট কয়েন নিয়ে সমস্যা। যদিও এই সমস্যা বহরমপুর কেন মুর্শিদাবাদেই নতুন নয়। বছর পাঁচেকের বেশি সময় ধরে বোধহয় এই সমস্যা চলছে। অথচ মুর্শিদাবাদের বাইরে এই কয়েন কিন্তু অচল নয়। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ( বহরমপুর ) এক শীর্ষ কর্তা একথা জানিয়ে বলেন, ” ছোট এক টাকার কয়েন কেন বহরমপুরের বাজারে চলে না তা ব্যবসায়ীরা ভাল বলতে পারবেন।”
মুর্শিদাবাদ ডিষ্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলছেন, ” সবাই নেয় না একথা ঠিক নয়। কেউ কেউ নেয় না হয়ত। কেন নেয় না তা খোঁজ নিয়ে বলতে পারব। ” তবে তিনিও দাবি করেন, ” ব্যাঙ্কে খুচরোর জোগান নেই তাই বাজারে খুচরোর টান। আবার এটিএমে টাকা তুলতে গেলে পাঁচশো টাকার নোট ছাড়া অন্য কোনও নোট মেলে না। আর মানুষ এই সব ঝামেলা মেটাতে গুগল পে, পেটিমের মতো অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমকে বেছে নিচ্ছেন। তাই বাজারে খুচরোর অভাব আছে।”
ব্যাঙ্কের ওই শীর্ষ কর্তা বলেন, “ব্যাঙ্কে সারাদিন খুচরো ভেন্ডিং মেশিন চলে। যারা ব্যঙ্কের গ্রাহক তাঁদের এই অসুবিধা হয় না। আর এটিমে ছোট নোট ঢোকানোর কোন সিস্টেম না থাকায় একশো, দুশো, পাঁচশো’র নোট রাখতে হয় তাও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে। তবে সব সময় সেখানে টাকা থাকে, দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে।”