প্রয়াত মনোজ মিত্র, স্মৃতিচারণায় প্রদীপ ভট্টাচার্য

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ প্রয়াত মনোজ মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার সকাল ৮.৩০টা নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের এই কিংবদন্তি শিল্পী। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ থিয়েটার ও সিনেমাপ্রেমী মানুষজনও।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তাঁকে মাস্টারমশাই হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বাংলা থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের আর এক পরিচিত মুখ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর প্রিয় ‘মাস্টারমশাই’এর প্রয়াণে স্বাভাবিকভাবে মন খারাপ তাঁর। তিনি বলেন, ” দীর্ঘদিন ধরেই মানুষটি ভুগছিলেন। উচ্চভাষী কোনওদিনই ছিলেন না। আড়ালেই থাকতেন। কম কথার মানুষটি শেষদিকে একা হয়ে গিয়েছিলেন।” তবে তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বরাবরই ভাল ছিল বলে জানান এই শিল্পী।

” বাঞ্ছা এল ফিরে” সিনেমায় ‘বাঞ্ছা’ চরিত্রে প্রদীপ ভট্টাচার্য

মনোজ মিত্রের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাতক্ষিরা জেলায়। দর্শনের ছাত্র মনোজ ১৯৫৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। থিয়েটার অন্তপ্রাণ মনোজ মিত্রের কর্মজীবন শুরু হয় বিভিন্ন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৮৪ সালে প্রদীপ যখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকের এমএ ক্লাসের ছাত্র, সেই সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন মনোজ মিত্র। গল্প লেখা দিয়ে শুরু হলেও পরে নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নাটক রচনা করেছেন। অভিনয় সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সুন্দরম’ নাট্য সংস্থা। প্রদীপ বলেন, ” আমাদের একবছর ‘সাইকোলজি ইন থিয়েটার’ পড়িয়েছিলেন মনোজ বাবু।” সেই থেকেই ছাত্র প্রদীপের সঙ্গে আমৃত্যু মনোজ মিত্রের ছিল সুসম্পর্ক।

মনোজ মিত্রের লেখা “চাক ভাঙা মধু ” নাটক প্রযোজনা করেছিল বহরমপুরের প্রান্তিক নাট্যসংস্থা। প্রদীপের তখন ২৬ বছর বয়স। সেই নাটকে এক বুড়োর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তাঁকে দাড়ি রাখতে হয়েছিল। প্রদীপ বলছেন ” সেই শুরু। তারপর আর দাড়ি কাটিনি। আর সাদা দাড়িও পরিকল্পনামাফিক করা। কারণ সাদা দাড়ি থাকলে বারবার তা পরিবর্তন করতে হয় না। এই দাড়িও আজ আমাকে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে।” সেই ‘চাকভাঙা মধু’ নাটকে তাঁর অভিনীত বুড়ো মানুষের চরিত্রই তাঁকে টেনে এনেছিল মনোজ মিত্রের সঙ্গে তুলনায়।

মনোজ মিত্রের বিখ্যাত নাটক “বাঞ্ছারামের বাগান” যা নিয়ে পরে তপন সিংহ সিনেমাও বানিয়েছিলেন। সেই বিখ্যাত নাটক ও সিনেমায় ‘বাঞ্ছা’ বুড়োর চরিত্রে অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন মনোজ। পরবর্তীকালে সেখান থেকে অমিতাভ পাঠক তৈরি করেন সিনেমা “বাঞ্ছা এল ফিরে”। সেই সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পান প্রদীপ। তাঁর মাস্টারমশাই অভিনীত বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘বাঞ্ছা’ চরিত্রেই তাঁকে অভিনয় করতে হয়েছিল, ” যা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।” “আমার মতো মফঃস্বলের একজন মানুষের কলকাতায় ডাক পাওয়ার থেকেও বড় ব্যাপার ছিল সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করা।” পুরনো দিনের কথার প্রসঙ্গেই জানালেন ‘বহুরূপী’র খুড়ো। আজ তাঁর সেই প্রিয় মানুষটিই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

One thought on “প্রয়াত মনোজ মিত্র, স্মৃতিচারণায় প্রদীপ ভট্টাচার্য

  1. সুন্দর স্মৃতিচারণ।
    পরপারের বাগানেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকুন আপনি বাঞ্ছারামবাবু! 🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights