
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ অযোধ্যা পাহাড়, ছৌ নাচ, শিমুলের দেশ পুরুলিয়াকে সম্প্রতি নতুন পরিচয় দিয়েছেন মালতি। মালতি মুর্মু। সরকারের খাতায় এই জেলায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষার হার কম। এই সাঁওতাল রমণী সেখানে শিক্ষার আলো জ্বালানোর শপথ নিয়েছেন। সে কথা আজ ছড়িয়ে গিয়েছে দিকে দিকে। তাঁর কথা দু’শো কিলোমিটার দূরে বসে শুনেছিলেন রূপক মজুমদার, দেবাশিস ভট্টাচার্যরাও।
তাঁরা শুনেছিলেন, উচ্চমাধ্যমিক পাশ তরুণী মালতির ইচ্ছের কথা। স্বপ্নের কথা। শুনেছিলেন একটা পিছিয়ে পড়া জিলিংসেরেং গ্রামের কচিকাঁচাদের জন্য আস্ত একটি স্কুল খুলে ফেলেছেন তিনি। আলচিকি ভাষায় সেখানে তাঁদের মালতি শেখাচ্ছেন “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।” তাঁর সেই পরিশ্রমের কোনও মূল্যও চাননি। চেয়েছেন শিশুরা যেন লিখতে পড়তে পারে। সেই মাটির দেওয়াল তোলা ঘরে ৪৫ জন শিশু আজ শেখার আনন্দে পড়তে আসে “মালতিবালা বিদ্যালয়ে”। পড়া শেষ হলে যায় গ্রামেরই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে।

ইচ্ছে থাকলে সব হয়। গত পাঁচ বছর ধরে শিশুদের কলতানে মালতির সেই বিশ্বাস একটু একটু করে দৃঢ় হয়েছে আজ। মালতির স্বপ্ন একবার ছুঁয়ে দেখতে তাঁর স্কুলে রবিবার পৌঁছে গিয়েছিলেন রূপক, রূপকের স্ত্রী শাশ্বতী তাঁদের একমাত্র পুত্র পথিক আর দেবাশিসও। রূপকের বাবা পরেশনাথ মজুমদার মারা গিয়েছেন ন’বছর আগে। বাবার জন্মদিন উপলক্ষে রূপক প্রতি বছর কিছু না কিছু করেন। কখনও দুঃস্থদের খাওয়ান। কখনও কোনও পিছিয়ে পড়া গ্রামে চলে যান সেখানকার শিশুদের খাওয়াতে কিংবা পড়াতে। বলছিলেন তাঁর স্ত্রী শাশ্বতী।
তাঁর আত্মীয় দেবাশিস বাবুর স্ত্রী আরাধনা গত হয়েছেন বছর সাতেক আগে। স্ত্রীর জন্মদিনকে মনে রেখে দেবাশিস বাবুও এবার সঙ্গ দিয়েছেন রূপককে। স্বজনের স্মরণে এবার মালতির বাস্তবের ‘গল্প’কে উসকে দিতে তাঁর স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য একটি কম্পিউটার সেট তুলে দিয়েছেন তাঁরা। দেবাশিস বাবুর কথায়, “ওরাও পরিচিত হোক আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে। তাই তো আমাদের ছুটে আসা এতদূর থেকে।” রূপকের স্ত্রী বলেন, ” সবাই এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে। ওরাও এগিয়ে যাক। ওরাও সফল হোক।” শিশুদের সঙ্গে তাঁরা ভাগ করে নিলেন দুপুরের খাওয়া দাওয়াও। সঙ্গ দিলেন মালতির সহযোদ্ধা স্বামী বাঁকা মুর্মুও।
স্বপ্নের উড়ান বাস্তবের মাটিতে ধরা দেবে অযোধ্যা ঘেঁষা জিলিংসেরিং গ্রামে। রূপক, শাশ্বতী, পথিক, দেবাশিসরা সেই স্বপ্নের লক্ষ্যটাকে এদিন একটু বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন বলছিলেন গ্রামেরই কেউ কেউ। বর্ধমান থেকে গিয়ে এদিন তাঁরা ঘুরে ঘুরে দেখলেন আজন্ম অবহেলিত পাহাড় ঘেরা এক সাঁওতাল গ্রাম। দেখলেন হাজার ওয়াটের আলোয় ঢাকা এক পৃথিবীর বাইরে আরও এক পৃথিবী। এ এক অন্য পৃথিবী। যা শুধু স্বপ্ন দিয়েই মোড়া।