সংবাদ প্রতিনিধি, পুরুলিয়াঃ বসন্তের দুপুরে পুরুলিয়ায় সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে একযোগে দলীয় নেতা কর্মীদের যেমন শাসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তেমনি বিরোধী দল বিজেপিকেও ছত্রে ছত্রে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েন নি তিনি। লোকসভা নির্বাচনের মুখে সন্দেশখালি এখনও জ্বলন্ত ইস্যু বিরোধীদের কাছে। মঙ্গলবার সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক ধৃত নিরাপদ সর্দারকে আদালত জামিন দিয়েছে। সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে বাধা পেয়েছেন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল। বারবার শাসকদলের নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছে তারা। পরোক্ষে ভাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা স্বীকার করে নিয়েছেন সন্দেশখালিতে ‘কিছু’ অভিযোগের সত্যতা। এই অবস্থায় দলের প্রতি তাঁর মনোভাব বুঝিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী পুুরুলিয়াকেই বেছে নিয়েছেন বলে মত রাজনীতির অলিন্দে।
এদিন পুরসভা থেকে পঞ্চায়েত এমনকি জেলা পরিষদের দলীয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একসাথে সবাই মিলেমিশে কাজ করবেন। মনে রাখবেন আমরা কিন্তু সবাই ছোট। মানুষ কিন্তু বড়। মানুষ আপনাকে জিতিয়েছেন তাই এই জায়গায় এসেছেন। মানুষ ছুড়ে ফেলে দেবে তখন কিন্তু তাকিয়েও দেখবে না কেউ।” এরপরেই কড়া ভাষায় দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ” আমি চিরকাল এই কথাতে বিশ্বাস করেছি। যদি আপনি এই কথাটা বিশ্বাস করেন তাহলে আমার সাথে থাকবেন। না হলে নিজের ঘরে যান কংগ্রেস করুন, বিজেপি করুন, সিপিএম করুন আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস করে মানুষকে বঞ্চনা করা যাবে না।”
লোকসভা নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার পুরুলিয়া গিয়ে একদিকে কয়েক কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে এদিন তিনি বলেন, “একদল লোক আছে কোনও কাজ করে না শুধু মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। যাদের কাজ নেই, তারা মিথ্যা কথা বলে। আমাদের অনেক কাজ আছে। আমি মিথ্যা কথা বলাকে ঘৃণা করি।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে এই লোকসভা আসনে বিজেপির কাছে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে হেরে যায় তৃণমূল। শুধু এই পুরুলিয়া বিধানসভাতে তৃণমূল পেয়েছিল ৬৬ হাজার ২৫২ টি ভোট। সেখানে বিজেপি প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ২ হাজার ৭৪৯টি। ২০২১ সালের বিধানসভাতেও সেই হারের ধারাা বজায় ছিল এই জেলার একাধিক বিধানসভায়। যদিও পঞ্চায়েত ভোটে ঘুরে দাঁড়ায় রাজ্যের শাসক দল। এই স্কোর কার্ড হাতে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে তাই সচেষ্ট তৃণমূল নেত্রী। এই জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া লোকসভা আসনও। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আজ মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যেমন আদিবাসীদের কথা উঠে এসেছে তেমনি তাঁকে বাংলা ও হিন্দিতেও ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছে।
বুধবার দুর্গাপুর সার্কিট হাউস থেকে উড়ানে পুরুলিয়া পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে শিমুলিয়া ময়দানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের মঞ্চ থেকে পুরুলিয়া জেলার মোট ৪৩০ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। যার প্রকল্প ব্যয় ৩৬২.৩০ কোটি টাকা। এই মঞ্চ থেকেই মোট ২৮১ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার মোট প্রকল্প ব্যয় ৩৯৯৯.৬২ কোটি টাকা।
উল্লেখযোগ্য প্রকল্প গুলি হল, পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোটে মন্দির/স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যাদির পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ, মানবাজার-১ নং ব্লকে স্টেডিয়াম নির্মাণ, জয়পুর ব্লকে অঘোরপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব নির্মাণ, বলরামপুর ব্লক কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে শ্যাম স্টিল সংস্থার ইন্ট্রিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্ট-এর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “এই প্রকল্পের ফলে আগামী দিনে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হবে।” তিনি বলেন, ” একবারে সব টাকা সংসার চালাতে গিয়ে দিতে পারি না। ভাগ ভাগ করে দিতে হয়। কিন্তু মনে রাখবেন আগামী দিনে আমরাই আপনাদের কাজ করে দেব। আপনাদের কারও প্রতি তাকিয়ে থাকতে হবে না।” এদিন তিনি সভায় উপস্থিত উপভোক্তা ও দলের কর্মী সমর্থকদের বলেন, ” মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরিতে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে জানাবেন।”