বিদ্যুৎ মৈত্র,কলকাতাঃ আইনজীবীর কালো জোব্বা খুলে রাজনীতির অলিন্দে প্রবেশ করলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে বিচারপতি হিসেবে পদত্যাগ করার পর থেকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিতের এখন পরিচয় তিনি একজন বিজেপি সদস্য। ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় তাঁর সরকারিভাবে বিজেপিতে যোগদানের কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন মঙ্গলবার। বলেছেন,”আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ মার্চ যোগ দেব বিজেপি-তে। তবে লড়ব কী লড়ব না বিজেপির উচ্চ-নেতৃত্ব জানাবেন।” বাংলায় প্রথম দফায় ২০টি আসনের প্রার্থী পদ ঘোষণা করেছে বিজেপি। বাকি আসনের কোনও একটি তাঁর জন্য বরাদ্দ করতে পারে গেরুয়া শিবির।
তবে অন্য দলের সঙ্গে তাঁর তেমন মিলমিশ না হওয়ায় তিনি বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। তিনি বলেছেন, ” আমি অন্য দলেও যেতে পারতাম। কিন্তু অন্য দলের সঙ্গে মিলমিশ হল না।” উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছেন সিপিআইএমকে। বলেছেন, ” আমি ওই দলে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি ধর্মে বিশ্বাস করি। ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। তাঁরা সেগুলো করেন না। হয়ত ভেতরে ভেতরে করে্ন। ফলে তাঁদের সঙ্গে আমার মিলই খাবে না।”
এক সময় বঙ্গবাসীর অনেকেই ভেবেছিলেন অবসর জীবনে রাজনীতিতে নামলে হয়ত লাল পতাকার নিচে দেখা যেতে পারে এই ‘ডাকাবুকো’ বিচারপতিকে। চলতি বছর কলকাতা বইমেলায় তাঁকে বামেদের বুকস্টলেও ঢুঁ মারতে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবি ফলাও করে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে পোস্টও করেছিল DYFI। বুকস্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন। নেড়েঘেঁটে দেখেছিলেন ‘ইনসাফ যাত্রার ডায়েরী’। সেদিন তাঁর একহাতে ছিল চে-গুয়েভরা অন্য হাতে ছিল কিউবা বিপ্লব। সেই ব্যক্তির এদিন “ঢাকঢোল পিটিয়ে” বিজেপি-তে নাম লেখানো প্রসঙ্গে কী বললেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়?

তিনি বলেন, “দেশ ও রাজ্য বাঁচানোর জন্য যদি উনি রাজনীতিতে আসতেন তাহলে উনি কোনওমতেই বিজেপিতে নাম লেখাতেন না।”
যদিও এই সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত বলেও জানিয়েছেন এই বাম নেত্রী। ওই সাংবাদিক সম্মেলনেই তিনি রাজ্যের শাসক দলের সমালোচনা করে বলেন, “বর্তমান সরকারের হাল ২০০৯ সালের সিপিএমের হালের মতো হবে।” কথা প্রসঙ্গে রাজ্যে বামেরা কী ফের শাসন ক্ষমতায় ফিরতে পারে? প্রশ্ন করলে বিচারপতি কয়েক মূহুর্ত থেমে যান। পরে প্রশ্নকর্তাকেই উল্টে বলেন, “আপনিই বুঝে নিন।”
যার ইঙ্গিত ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে ১৩ বছর। নতুন যুবদের সামনের সারিতে এনে লড়াইয়ে ফিরেছে সিপিআইএম। হয়ত এখনও তাদের রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ফেরার সময় হয়নি বলেই বিচারপতি মূহুর্ত অপেক্ষা করে প্রশ্নকর্তাকে এমন প্রশ্ন করেছেন বলে মত রাজনীতির কারবারীদের। যা শুনে মীনাক্ষী অবশ্য বলেন, “দেশ ও রাজ্য বাঁচানোর জন্য লড়াইয়ের ধক সবার থাকে না।”