
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পরিচয় পত্রের পাশাপাশি আয়ের শংসাপত্র সহ ইত্যাদি নানাবিধ কাগজপত্র সই সাবুদের বিনিময়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ঋণ কবে পাবেন, কতদিন পরে পাবেন তার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ পেতে দেরি হয় বলে অভিযোগ ওঠে। দেখা যায় যখন সেই ঋণের দরকার তার অনেক পরে ব্যাঙ্ক থেকে ছাড়পত্র মেলে। আর সেই সুযোগে চারপাশে বাড়ছে বেআইনি সুদের কারবার।
আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, ” দু’পক্ষের মদতেই এই কাজ চলে। একপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা দেখালে আইনি পথে ঋণ পাওয়া যায় সেই কাগজপত্রের অভাব রয়েছে। অন্য পক্ষ সেই সুযোগে নিজের উদ্বৃত্ত টাকা তাঁর আয় ব্যায়ের হিসেবে না দেখিয়ে এই পথে খাটিয়ে দুপয়সা কামিয়ে নেয়। আর সেই কারণেই এই কারবার চলে আইনকে ফাঁকি দিয়ে।”
মুর্শিদাবাদ জেলাতে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই ধরনের কারবার বেশি চলছে বলে মত একাধিক মহলের। সাধারণত, এই নিয়ে অভিযোগ না এলে পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বহরমপুরের কাশিমবাজারে একসময় বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এই কারবারে যুক্ত ছিলেন। এখন সেই রমরমা কমলেও আড়ালে আবডালে এই কারবার চলছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ঋণ গ্রহীতা কখনও চাপ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন ঋণ দাতার বিরুদ্ধে। কখনও ঋনদাতা বলেন, অনেকেই সুদে টাকা ধার নিয়ে দিচ্ছি দেব করে কাটিয়ে দেয়। সুদ তো পাওয়াই যায় না। আসল ও মেলে না অনেক সময়।
বহরমপুরে গত রবিবার রাতের ঘটনায় ফের সুদ কারবারের কথা সামনে আসায় ফের নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ওইদিন কাশিমবাজার এলাকার বাসিন্দা রাহুল রায়চৌধুরীর কাছে সুদের টাকা চাইতে গিয়ে তাকে মারধর করে সুদের কারবারি সোম মন্ডল। রাহুলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বহরমপুর থানার পুলিশ সোমকে গ্রেফতার করেছে। যদিও সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সোম ও তার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এলাকার কাউন্সিলর বাবন রায়ের বিরুদ্ধে। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সোমের বিরুদ্ধেই।
চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়ার কারবার চালাত বছর ৩৫ এর যুবক সোম মন্ডল। তাঁর সেই কারবারের সঙ্গী সোমের স্ত্রীও। প্রাক্তন সেনা কর্মী সোমের বাড়ি বহরমপুরের মধুপুর এলাকায়। সোমের মা বাস করেন কাশিমবাজার এলাকায়। মধুপুর থেকে কাশিমবাজার পর্যন্ত এলাকায় তার এই কারবার চলত। আর ওই এলাকা থেকেই সোমের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, মারধর এমনকি হুমকিরও অভিযোগ উঠছে। এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায় সোমের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন বছর খানেক আগে।
তিনি বলেন, ” আমার প্রয়োজনে বিশ হাজার টাকা সোমের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম। ১৫ শতাংশ সুদের হিসেব কষে প্রতি মাসের বেতন থেকে দু’হাজার টাকা করে কেটে নিত।” কিন্তু মাঝপথে গাড়ির ভাড়া নিয়ে যাওয়া সংক্রান্তের জেরে সোমের বাড়িতে রাখা বিশ্বজিতের একটি দু-চাকা বাইক ভেঙে দেয় সোমের স্ত্রী, অভিযোগ বিশ্বজিতের। গাড়ি ভাঙার কারণে বাকি থাকা টাকা বিশ্বজিত আর সোমকে ফেরত দেননি। গাড়ি চালানোর কাজও ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
পেশায় টোটো চালক মণীন্দ্র নগর এলাকার আর এক বাসিন্দা সুরজ সরকারের অভিযোগ ” আমি হঠাৎ করে দু-মাস টাকা দিতে পারিনি। সে কথা জানিয়ে বলেছিলাম অতিরিক্ত যা সুদ লাগে তা দিয়ে দেব। কিন্তু সে কথা শোনেনি। উল্টে মাকে আকথা কুকথা শুনিয়ে এসেছিল বাড়ি গিয়ে। যে বাড়িতে ভাড়া থাকি সেই বাড়ির দিদিকেও অশালীন কথা বলে আসত বাড়ি গিয়ে। বাড়ি তুলে দিয়ে ক্লাব করে দেওয়ার হুমকি দিত।” মধুপুর তাঁর বসত এলাকাতেও সোমের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে, কারও বাড়ির দরজা ভেঙে, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিয়েও সুদ আদায়ের অভিযোগ সামনে এসেছে।
অরিন্দম বলছেন, ” বেআইনি আর্থিক লেনদেনের যে সংস্থা রয়েছে একমাত্র তাঁরা সক্রিয় হলেই এই ধরনের কারবার বন্ধ হতে পারে। না হলে এই ধরনের কারবার চলতেই থাকবে।”