‘উৎসবে আর ফিরছি না’ বলে দিলেন বহরমপুরবাসী

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বার্তা পাঠালেন বহরমপুরের নাগরিক সমাজ। শ্লোগানে শ্লোগানে তাঁরা পরিস্কার জানিয়ে দিলেন “মানছি না মানব না। উৎসবে আর ফিরছি না।” নব্বই পেরনো রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অমৃত গুপ্ত প্রায় হাজার লোকের সামনে প্রতিশ্রুতি দিলেন, “আমি আমৃত্যু তোমাদের আন্দোলনের শরিক।” এমনকি চিকিৎসকদের গণ ইস্তফার পরিকল্পনাতেও করতালি দিয়ে সায় দিয়েছেন ওঁরা। সব মিলিয়ে সোমবার রাতে আবেগে ফুটছিল বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড় চত্বর। যদিও সেই স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের আগুনে দুপুরেই ঘি পড়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে।

সোমবার এক বুক আশা নিয়ে শীর্ষ আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিল বঙ্গ সমাজ। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সহ তিন বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ হতাশ করেছে তাঁদের। একইসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফে এদিন কোনও রিপোর্ট জমা না পড়ায় সন্দেহ দানা বেঁধেছে জনসাধারণের মনে। গত ৯ অগস্ট গভীর রাতে বিনা বাধায় আরজিকর হাসপাতালের কর্মরত একজন তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। তারপর থেকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিহতের ন্যায় বিচারের দাবিতে উত্তাল হয় বঙ্গবাসী। কুচবিহার থেকে কাকদ্বীপ ১৪ অগস্ট রাত জাগেন আট থেকে আশি বয়সের নারীরা। বাদ ছিলেন না পুরুষরাও। তারপর থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন সমাজের প্রতিটি কোণে কোণে হয় মিছিল, না হয় পথসভার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে অরাজনৈতিকভাবে নানান ব্যানারে। সব মহলের একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজিকর।

ইতিমধ্যে তিরিশ দিন পেরিয়ে গিয়েছে পানিহাটির বাসিন্দা ওই তরুণী চিকিৎসকের নিহত হওয়ার ঘটনা। ২৫ দিন ধরে সিবিআই তদন্ত করছে এই হত্যাকান্ডের। কিন্তু কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে যে সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল তার বাইরে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিকে আজ পর্যন্ত ধর্ষণ কান্ডে গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। যদিও আর্থিক দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগে আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রের এই তদন্তকারী সংস্থা। এদিকে মূল ঘটনা ও তার তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানতে অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যবাসী।

সংগৃহিত ছবি

এমন সময় সুপ্রীম কোর্ট জুনিয়র চিকিৎসকদের একপ্রকার হুমকি দিয়ে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। আর তা করতে হবে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে। প্রায় একইসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে চিকিৎসক ও রাত জেগে যে আন্দোলন হচ্ছে শহর থেকে গ্রামে সেই সব আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ একমাস হয়ে গিয়েছে। পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।” যা এককথায় আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে।

আরও জোরাল হয় শ্লোগান। বহরমপুরে তিলোত্তমা হত্যার একমাস পূর্তি ও বিচার অধরা থাকার প্রতিবাদে একটি কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল আগেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নানান পেশার প্রায় হাজার খানেক মানুষজন। সকলেই সেখানে মুহুর্মুহু শ্লোগান তোলেন “মানছি না মানব না/ উৎসবে আর ফিরছি না।” শিক্ষক সুগত সেন বলেন, ” বিচার চাইব না। আমরা বিচার আদায় করে নেব। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, সিঙ্গেল বেঞ্চ, ডিভিসন বেঞ্চ এসব চেয়ার বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের নিজেদের বিচার আদায় করে নিতে হবে নাগরিক আন্দোলন, গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।” বিশিষ্টজনদের বক্তৃতা ও ঋত্বিক নাট্য সংস্থা ও সঙ্গীত সংস্থা ইয়ুথ কয়্যারের সঙ্গীত পরিবেশনেও এদিন ছিল প্রতিবাদের সুর।

আরও পড়ুনঃ গণ ইস্তফার পরিকল্পনা চিকিৎসকদের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights