ওয়াকফ বিল বিরোধিতায় নওদায় জনসভা তৃণমূলের

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, নওদাঃ আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ সংসদে যে ঝড় তুলতে চলেছে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্রই। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত এই বিল লোকসভায় পাশ হওয়া ইস্তক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা ছাঁটতে পরিকল্পিতভাবে এই সংশোধনী বিল আনতে চাইছে সরকার। শুধু তাই নয়, সেই বিল লোকসভায় পাশ না হওয়ায় তা পাঠানো হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে। কমিটিও রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে বিভিন্ন মুসলিম প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। আর সেই বিরোধীতার প্রথম সারিতেই আছে তৃণমূল। প্রসঙ্গত, কমিটির সদস্যদের কলকাতা সফরের কথা ছিল চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার। কিন্তু সেই সফর বাতিল হয়েছে।

নভেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত লোকসভায় অধিবেশন চলবে। এখনও তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনি শেষ হয়নি জেলায়। তারমধ্যেই শুরু হয়েছে তৃণমূলের ” জনবিরোধী ওয়াকফ অ‍্যামেন্ডমেন্ট বিল এর বিরোধিতা” কর্মসূচি। বাংলায় ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনের দিন মুসলিম অধ্যূষিত মুর্শিদাবাদের নওদায় শুরু হল সেই কর্মসূচি। আয়োজক জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও নওদা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সফিউজ্জামান শেখ ওরফে হাবিব।

কেন ওয়াকফ বিলের বিরোধীতা করছে তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া ব্লক ? কী আছে সেই বিলে? মুসলিম আইন অনুসারে মুসলিম ব্যক্তি তাঁর সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে দান করতে পারেন। সেই সম্পত্তি কেউ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত সেই বিলে বলা হয়েছে, কোনও সম্পত্তিকে এরপর ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করবেন জেলাশাসক। আগে তা ওয়াকফ বোর্ড ঘোষণা করত। বিলটিতে আরও বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম সদস্য ছাড়াও বাধ্যতামূলকভাবে আরও দুই ভিন্ন ধর্মের সদস্যরা সেই বোর্ডে থাকবেন। আর ওই বোর্ড ধর্মনিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে গণ্য হবে। আর এখানেই আপত্তি বেশে মুসলিম সমাজের।

তাঁদের প্রশ্ন, অন্য ধর্মের এইরকম বোর্ডের ক্ষেত্রে কেন ভিন ধর্মের মানুষ প্রতিনিধিত্ব করেন না ? এখানেই ইন্ডিয়া ব্লকের প্রতিনিধিদের দাবি, মুসলিমদের কোণঠাসা করতেই এই বিল আনতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। শুধু তাইই নয়, কোনও মানুষ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করলে তবেই তিনি তাঁর সম্পত্তি ওয়াকফকে দান করতে পারবেন। তার আগে নয়। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নও রয়েছে বিরোধীদের। যদিও বিজেপি নেতাদের পাল্টা দাবি, বিনা বাধায় দেশজুড়ে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি হওয়া ঠেকাতেই বিল সংশোধন করা হচ্ছে।

তবে সে কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র পালে হাওয়া কাড়তে এখন থেকেই ওয়াকফ অস্ত্রে শান দিতে চাইছে তৃণমূল। তাই জেলায় জেলায় তৃণমূল স্তর থেকে শীর্ষ স্তরের নেতাদের দলের নয়া কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ পাঠিয়েছে কালীঘাট। সেই নির্দেশ মেনে দলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার প্রতিটি ব্লক সভাপতি থেকে শাখা সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নওদায় টেনে এনে বিজেপি বিরোধীতার সুর চড়ালেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ তথা ওয়াকফ বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য আবু তাহের খান। আমতলা হাইস্কুলের মাঠের সেই মঞ্চে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখলেন বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী স্বামী পরমানন্দ মহারাজ।

ইমাম সংগঠনের জেলা ও রাজ্যের দুই শীর্ষ নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাহের খান বলেন, ” দেশ জুড়ে কৃষকদের আন্দোলনের চাপে বিজেপি সরকার ‘কৃষি বিল’ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। কোনও রাজনৈতিক দল শেষ কথা বলে না। শেষ কথা বলে মানুষের আন্দোলন। এক্ষেত্রেও মানুষের আন্দোলন এমন জায়গায় যাবে, যেখানে বিজেপিকে ফের সবক শেখানো যাবে।” তিনি আরও বলেন, ” আগামী দিনে মুর্শিদাবাদে এই বিলের বিরোধিতার ঝড় আছড়ে পড়বে।” ওই সভায় ওয়াকফ বোর্ডের বর্তমান সদস্য খলিলুর রহমান আমন্ত্রিত থাকলেও তিনি এদিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাহের বলেন, “খলিলুর সাহেবের আগে থেকে ঠিক করা আজ একটি জরুরী বৈঠক থাকায় তিনি এই সভায় আসতে পারেননি।” তবে রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন ওই সভায়। তবে ডাক না পাওয়ায় ওই বৈঠকে আসেননি নওদার তৃণমূল বিধায়ক সাহিনা মমতাজ বেগম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights