
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আরজি কর কাণ্ডের পর অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রোগী কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধেও। সেই সময় রোগী কল্যাণ সমিতির মাথায় ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বা জন প্রতিনিধিরা। কোথাও জেলাশাসকও ছিলেন ওই সমিতির চেয়ারম্যান। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর নিজেই সেই সব কমিটি ভেঙে দিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি মেনে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের।
এছাড়া হাসপাতালের সুপার, এক জন জুনিয়র ডাক্তার, এক জন সিনিয়র ডাক্তার ও নার্সের সঙ্গে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সরকারি সদস্য হিসেবে এই সমিতিতে থাকবেন বলেও জানানো হয়েছিল। সেইমতো রোগী কল্যাণ সমিতিতে কোথায় কোন জনপ্রতিনিধি থাকবেন তার নতুন তালিকা প্রকাশ করল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তালিকায় সদস্য হিসেবে বিধায়ক ও মন্ত্রীদের নাম থাকায় অধ্যক্ষরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন সেই প্রশ্নেই এদিন সরব হল চিকিৎসক মহল। এই তালিকাকে ” সরকারের প্রহসন ” বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী।
সোমবার রাজ্যের ২৪টি মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির নয়া তালিকায় মদন মিত্র, জাভেদ খানদের দেখা গেলেও নাম নেই শান্তনু সেন, সুদীপ্ত রায়দের। আবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব সামালাচ্ছিলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র। নয়া নিয়মে তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় দেখা যায় বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়াও আরজি কর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির সরকারি প্রতিনিধি করা হয়েছে অতীন ঘোষকে। আগে এই সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পদ থেকেে উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজিকে সরিয়ে সরকারি সদস্য করা হয়েছে মন্ত্রী শশী পাঁজাকে। এসএসকেএমে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস,এনআরএসে মানিকতলার বিধায়ক সুপ্তি পাণ্ডে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে গৌতম দেব, কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে মহুয়া মৈত্র, বাঁকুড়া সম্নিলনী মেডিক্যাল কলেজে অরূপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কৃষ্ণ কল্যাণী, রামপুরহাট সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কোচবিহার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অভিজিৎ দে ভৌমিক, আরামবাগের প্রফুল্লচন্দ্র সেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালে মিতালি বাগকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে সুব্রত বক্সি, বারাসত মেডিক্যাল কলেজে কাকলী ঘোষ দস্তিদার। এছাড়া মালদা মেডিক্যাল কলেজে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, বর্ধমান হাসপাতালে খোকন দাস, উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে গৌতম দেবকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এমনিতেই আমাদের দেশে যেকোনো কমিটির মাথায় মন্ত্রী এবং আমলারা বরাবর থাকেন। আজকের তৃণমূল নয়, গত ৭৫ বছর ধরেই এমন হয়ে আসছে। মাঝে মাঝে কোনো রাজ্যে বা কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কোনো নেতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ-মন্ত্রী বা অ-আমলারা কমিটি টমিটির মাথায় বসেন। সুতরাং রোগী কল্যাণ সমিতি নিয়ে ঘাবড়াবেন না। ওভাবেই হয়। তৃণমূলের আমলে সর্বত্র দলের লোক গুঁজে দেওয়া বা দলের লোককে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে সবকিছু পরিচালনা করা একটু শৈল্পিক বাড়াবাড়ি রকমে দেখা যাচ্ছে বলে এত কথা।
এ জিনিস মহারাষ্ট্রে তামিলনাড়ুতেও হয়। কিন্তু ওখানে মসৃণ রাস্তাঘাট, কলকারখানা, ছেলেপুলেদের চাকরি এবং ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া ইত্যাদি সব বাঁচিয়ে যে যার পার্টির ধান্দা দেখে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় ধাক্কা অনেক কম লাগে। এখানে ও দুটো জিনিস নিয়ে কারো ভাবার ইচ্ছে নেই। সিদ্ধার্থবাবুর ছিল না (বিধানবাবুররও খুব ছিল না, কল্যাণী বা দুর্গাপুর নিয়ে যতই বলুন আপনি, সমসময়ে অন্যান্য রাজ্যে কী কী হয়েছে তালিকা পেশ করলে বিধানবাবু লজ্জা পেতেন, বিধানমুগ্ধ বাঙালীও কোনোদিন সে তালিকা সন্ধান করেনি), জ্যোতি-বুদ্ধের ছিল ভাবছি ভাবছি ভড়ং, আর এঁর তো… যাক গে।