
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ জল জীবন মিশন প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ২০২৪-এই। ২০১৯ থেকে ২০২৪ এই পাঁচ বছরে প্রায় ১.৭৫ কোটি বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। হাপিত্যেশ অপেক্ষাই সার, বছর শেষ হতে চলল “হর ঘর নল সে জল” পৌঁছায়নি। বাংলার মাত্র ৯৩.৫০ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের স্বাদ পেয়েছেন।
এই অবস্থায় পানীয় জল সরবরাহের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সোমবার রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসক, পুলিস সুপারদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্য সচিব সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসও। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অপচয় রুখে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছতে কড়া বার্তা দেন আধিকারিকদের। সোমবার বেলা তিনটে পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে জলের অপব্যবহার নিয়ে প্রায় ১৮ হাজার ২৩০টি অভিযোগ পেয়েছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন জেলার ১৫৫ জন ঠিকাদার এবং ১৯ জন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ করা হয়েছে।
রাস্তায় জলের পাইপ কেটে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা,সমীক্ষা না করে পাইপ বসিয়ে দেওয়া, কোথাও জলের পাইপ কেটে ব্যক্তিগতভাবে সেচের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের জানিয়েছেন। এর আগেও প্রত্যেক ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা না হলেও রাস্তায় রাস্তায় পানীয় জলের কল বসানোর কথা জানিয়েছিল সরকার। এখন বাড়ি বাড়ি জল পৌছে দেওয়ার সরকারি ঘোষণায় এক ধাক্কায় উপভোক্তার সংখ্যাও বহুগুণ বেড়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফলে সেই কাজ নতুনভাবে করতে গিয়েও কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। নদিয়ার নাকাশিপাড়া ব্লকের বিডিও স্নেহাশিস দত্ত বলেন, ” আমাদের ব্লকে ১২টি জলাধার তৈরির কাজ চলছে। কোথাও কোথাও পাইপ লাইনের সংযোগ ঠিক নেই, সেগুলি নতুন করে ঠিক করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ঘরে ঘরে জল পৌঁছতে দেরি হচ্ছে।” নাকাশিপাড়া ব্লকের ৩৭টি গ্রামে জলের সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে জল পৌঁছায়নি।
তিনি জানান, এই কাজ করতে শেষ করে ঘরে ঘরে জল যেতে এখনও মাস দু’তিনেক সময় লাগবে। একইসঙ্গে পানীয় জলের পাইপ কেটে সেচের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন নজির ওই ব্লকে না থাকলেও পিএইচই-র ইঞ্জিনিয়ররা নাকাশিপাড়া থানায় কমবেশি একশো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন যাঁরা পাইপ কেটে সেই জল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সোমবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন নদিয়া জেলায় জলের অপচয় নিয়ে তিনি প্রায় ২,২৫৬টি অভিযোগ পেয়েছেন। জেলায় সব থেকে বেশি পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পানীয় জলের অপচয় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। মুর্শিদাবাদেও পানীয় জলের অপচয় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ৭৬৪টি।
বৈঠকে জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোথাও পানীয় জলের অপচয় হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে। কড়া নজরদারির পাশাপাশি কোথাও কেউ সমঝোতা করলে তার বিরুদ্ধেও তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার অনুমতি না মেলায় বহু জায়গায় পানীয় জল পৌঁছচ্ছে না প্রায় ৯ লক্ষ পরিবারে অর্থাৎ প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন না। পাশাপাশি এই কাজ যেখানে যেখানে চলছে সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজে লাগানোর নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।