
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রয়াত হলেন আরএসপি’র মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক অঞ্জনাভ দত্ত। সোমবার বিকেল ৫.৪৫ নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ৫৭ বছর বয়সী এই বাম নেতা রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী কাকলী দত্ত ও পুত্র অভিনভ দত্তকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্নায়ুর রোগে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন অঞ্জনাভ। গত বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তড়িঘড়ি বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দলের পক্ষে মনোজিৎ চৌধুরী বলেন, ” শনিবার বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার শরীর খুব খারাপ হয়। বহরমপুর থেকে রবিবার কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন আজ বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।”
ছাত্র রাজনীতিতে বেড়ে উঠে দলের যুব সংগঠন বিপ্লবী যুব ফ্রন্টের সর্বভারতীয় সম্পাদক হয়েছিলেন অঞ্জনাভ। পরে মূল দল আরএসপি’র জেলা সংগঠনেও দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে জেলায় আরএসপি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও পরে তা ক্ষীণ হয়। রাজ্যে পালাবদলের পর ক্ষয়িষ্ণু আরএসপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরাই, যাঁরা দলের নীতিকে ভালবাসতেন।
অঞ্জনাভ ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। বাইশ বছর পরে ২০২২ সালে তৎকালীন জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। যদিও সেই পথ মসৃণ ছিল না। প্রবীণ ও নবীনের দ্বন্দ্ব বেঁধে যায় দলের ২৩ তম জেলা সম্মেলনে। প্রবীণদের সরিয়ে জেলা সম্মেলনের এক সপ্তাহ পরে সম্পাদক হিসেবে অপেক্ষাকৃত তরুণ অঞ্জনাভকেই বেছে নেয় দলের তরুণ প্রজন্ম।
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে নির্বাচনী জোট হলেও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে সমর্থনে নারাজ ছিল আরএসপি। দলের নিচু তলার কর্মীরা বেঁকে বসে কংগ্রেসকে সমর্থন দিতে। তাঁদেরকে বুঝিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া একপ্রকার কঠিন কাজ ছিল অঞ্জনাভর। সেই পর্ব পেরিয়ে দলকে ফের আন্দোলনমুখী করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। দলীয় পতাকাকে প্রায় ভুলতে বসা কর্মী সমর্থকদের কাছে পৌঁছতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছিলেন সম্পাদক। জেলায় যেখানে সংগঠনের এখনও ভিত আছে সেখানে গিয়ে কর্মীদের উ দ্বুদ্ধ করতে কর্মসূচিও গ্রহণ করছিলেন।
গত ১৯ মার্চ দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনও তিনি শারীরিকভাবে দূর্বল ছিলেন। জেলা কার্যালয়ে আসতে না পারলেও মণীন্দ্রনগরে দলের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েই। চলতি বছরেই দলের জেলা সম্মেলন। তার আগেই দলের সম্পাদকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ দলের নেতা কর্মীরা। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ আরএসপি’র প্রবীণ নেতা প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ” একজন তরুণ নেতার মৃত্যু দলের পক্ষে এক অপূরণীয় ক্ষতি। ছাত্র, যুব হয়ে মণীন্দ্রনগর এলাকার একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিল, পরে আরএসপি’র জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিল অঞ্জনাভ। অসময়ে তাঁর মৃত্যুতে দলের বড় ক্ষতি হল। “
আগামীকাল তাঁর মরদেহ প্রথমে তাঁর মণীন্দ্রনগরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে সকাল ন’টা নাগাদ দলীয় কার্যালয়ে সকাল এগারোটা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শায়িত থাকবে। সেখান থেকেই শেষকৃত্যের জন্য রওনা দেবে অঞ্জনাভ’র নিথর দেহ।