
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বছর সাতেক আগে একবার কেঁপে উঠেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের লালবাড়ি। সেবার দলেরই এক জনপ্রিয় যুব নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ, সুবক্তা, তাঁর বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল পার্টিকে। ২০২৪ সালে তিলোত্তমার বিচারের দাবি সহ যুগপৎ মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে যখন সরব রাজ্য ঠিক তখনই বৃদ্ধ সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে উঠল মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ফেসবুক লাইভে ওই সাংবাদিকের অভিযোগ, এর আগেও তাঁকে নানানভাবে হেনস্থা করেছেন তন্ময়। অথচ তিলোত্তমার বিচার চেয়ে পথে নামা আন্দোলনের সম্মুখে ছিলেন তিনিও।
প্রাক্তন বাম নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন সামলান। সিপিএম পার্টি থেকে বহিষ্কারের পর এখন যিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে বড় বামপন্থী।” ২০১৭ সালের ১৭ মে দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের আদর্শ না মেলায় সিপিএম তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করেছিল ঋতব্রতকে। সদ্য প্রয়াত সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ব্যক্তিগত জীবনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সেবার তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। এক্ষেত্রেও অভিযোগ প্রমাণিত হলে তন্ময়কে বহিষ্কার করা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই পার্টির কাছে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তন্ময়ের বিরুদ্ধে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ জমা হয়নি বলেই দাবি সূত্রের। আপাতত দল তাঁকে সাসপেন্ড করেছে বলে জানিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম।
তবে এই ঘটনা সিপিএম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ-এর রক্ত জল করা আন্দোলনে কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন তাঁদের প্রাক্তন সম্পাদক তন্ময় ভট্টাচার্য। এ নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। বিধানসভা, লোকসভা নির্বাচনে শূন্য হয়েও মানুষের মাঝে বারবার লাল পতাকাকে কার্যত জাগিয়ে রেখেছে সাদা পতাকার দামাল বাহিনী। তিলোত্তমা হত্যার পর তাঁরাই ঠিক করে দিয়েছিল আন্দোলনের অভিমুখ।
কিন্তু একজন মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করে রবিবার শাসক দলের হাতে দলের সমালোচনার হাতিয়ার তুলে দিলেন দমদমের এই প্রাক্তন বিধায়ক। তৃণমূলের নেতারা বললেন, “ওরা ওরমই।” কুনাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখলেন, “পুরো তদন্ত হোক। সত্য হলে সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্যকে এঁর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করুক পুলিশ। সিপিএম কী বলবে???? মুখে কুলুপ?” যদিও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি ওই ফেসবুক লাইভ দেখেছি। দেখে খারাপ লেগেছে। পার্টির নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই আমরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব।”
দলেরই বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ তাঁদের মাথা হেঁট করেছে বলে মনে করেন ডিওয়াইএফের নেতা কর্মীরাও। এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে জেলাতেও। সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাস বলেন, ” তন্ময়দা’র মতো মানুষ এই কাজ করেছেন শুনে আমরা হতভম্ব। তন্ময় দা আমাদের সঙ্গেও নানান ইয়ার্কি করেন। কিন্তু আজকালকার দিনে এই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত ছিল তাঁর। সিপিএম নেতা তন্ময় দা’র বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে সিপিএম ব্যবস্থা নেবে, এই বিশ্বাস আছে।”
কর্মীদের সেই বিশ্বাসেই সিলমোহর দিল দল।