বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ বিনা চিকিৎসায় যে রোগী মৃত্যুর কথা সরকারি নানান স্তরে ও সরকারি দলের কর্মীরা নানানভাবে প্রচার করছেন তার সঙ্গে বাস্তবের মিল প্রায় নেই বললেই চলে। বরং হাসপাতালের দরজায় দাঁড়ালে শোনা যাচ্ছে সিনিয়র চিকিৎসকরা থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা ভাল হচ্ছে। দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যেমন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এখানকার মেডিসিন বিভাগ নিয়ে ভুরি ভুরি অবহেলার অভিযোগ। রোগীদের মধ্যে ধারণাই হয়েছে, ” হেঁটে ভর্তি হলে দিন কয়েকের মধ্যে রোগী বাড়ির লোকের কাছে ফেরেন মৃতদেহ হয়ে।” দাবি হাসপাতালের এক নিচু তলার কর্মীরও। এখানে শয্যার তুলনায় রোগী বেশি। সিনিয়র চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যেত না স্বাভাবিক সময়ে। এখনও এই বিভাগ নিয়ে চিন্তায় হাসপাতাল প্রশাসকদের একাংশও।
সেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত পাঁচদিনে দু’জন ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সুপার অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ” দশ জন ডেঙ্গু রোগীর এখনও চিকিৎসা চলছে।” তবে শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে সেই সাদেক আলী (৬১)-র বাড়ির লোক অবশ্য চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর দাবি করেননি। আত্মীয় মহঃ তাসিরুদ্দিন বলেন, ” না ডাক্তাররা এখানে ঠিকঠাক চিকিৎসা করেছেন। প্লেটলেট কমে গিয়েছিল। আইসিইউতে বেড খালি না থাকায় ডাক্তার রেফার করা সত্বেও সেখানে ভর্তি করানো যায়নি।” বর্তমানে এই হাসপাতালও সিনিয়র চিকিৎসকদের আওতাধীন।
শুনুনঃ বাড়ির লোকের কথা নিচের ছবিতে ক্লিক করে
জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলনে থাকার জন্য রোগী মৃত্যুর যে তথ্য সরকার থেকে তুলে ধরা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ঠিক নয় বলে দাবি চিকিৎসক সমাজেরও। যে ২৪ জন রোগী মৃত্যুর তালিকা সমাজমাধ্যমে প্রায় ভাইরাল করেছেন একাংশ মানুষ সেই তালিকা অনুযায়ী সেই সব হাসপাতালে কোনও জুনিয়র চিকিৎসকই কাজ করেন না। রাজ্যের যেখানে যেখানে মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে সেই সমস্ত হাসপাতালেই জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজ করেন। তালিকায় প্রথম যে নামটি প্রকাশিত হয়েছে সেই শিবম শর্মা বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে সিনিয়র চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন। আবার তুফানগঞ্জের যে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেখানেও জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজ করেন না। একইভাবে তালিকা অনুযায়ী ২৪ জনের মধ্যে অর্ধেক রোগীর মৃত্যু যেখানে হয়েছে সেই সমস্ত হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজ করেন না। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের আন্দোলনকে ঘুরিয়ে দিতে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসক সম্পর্কে ভুল বার্তা পাঠানো হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক সমাজের একটা বড় অংশ।
সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক নির্মল কুমার সাহা বলেন, ” প্রত্যেকটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা হচ্ছে। আসলে এই যে আন্দোলন হচ্ছে সেই আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টিয়ে দিতে হবে। তারজন্য সরকার লোকজনদের দিয়ে এইসব অসত্য কথা তুলে ধরছে। সব ডিপার্টমেন্ট খোলা আছে। আর সব জায়গায় ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।” ওই চিকিৎসকের আরও দাবি, ” জুনিয়ররা তো শিক্ষানবীশ। ওরা কাজ শিখছে। একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য ওদের কতটুকুই বা ক্ষমতা দেওয়া থাকে। সরকার নিজের দোষ ঢাকতে এই সব অজুহাত দিচ্ছে।”
আরও পড়ুনঃ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতি থেকে দুর্নীতির অভিযোগ সিবিআইয়ের কাছেও