সংবাদ প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ করোনা কেড়ে নিয়েছে তরতাজা যুবককে। ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে দিন কাটাচ্ছেন বহরমপুরের মাজি দম্পত্তি। মানসদেব ও চন্দনা মাজির একমাত্র ছেলে জয়মাল্য মাজি পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়র। মাত্র ২৭ বছর বয়সে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের মে মাসের ১৩ তারিখ মাতৃসদনে (সেই সময় করোনা চিকিৎসা ওখানেই হচ্ছিল ) মৃত্যু হয়।
যদিও জয়মাল্যর বাবা মানসদেব মাজি চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ছেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী সর্বত্র দরবার করেছেন। তথ্য অধিকার আইনে জানতে চেয়েছেন আনুষঙ্গীক প্রশ্ন। দীর্ঘ তিন বছর ধরে ন্যায় বিচারের লড়াই। আশায় বুক বাঁধছেন প্রাক্তন গবেষক এই দম্পত্তি।
তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। সেই লড়াইয়ের শক্তি পেতে প্রত্যেক বছর একটি বেসরকারি সংস্থা ‘প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের’ র সঙ্গে যৌথভাবে ছেলের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করেন। ১৯ মার্চ জয়মাল্য-র জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ছোটদের জন্য আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন এবার। জয়মাল্য বেঁচে থাকলে ৩০ বছর বয়স হত। সেই উপলক্ষে তাঁরা নিজে হাতে রোপণ করেছেন বটবৃক্ষ।
প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্টে সমস্যা নিয়ে ২৯ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুরের প্রাক্তনী জয়মাল্য। সেদিন চিকিৎসকরা তাঁর করোনা পরীক্ষা করেননি। তার আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে করানো করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ১ মে হাতে আসে মাজি পরিবারের। ৩ মে সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তাঁকে করোনা চিকিৎসার জন্য মাতৃসদনে পাঠানো হয়। মানসবাবুর অভিযোগ, ” ২৯ তারিখ সঙ্গে সঙ্গে করোনা পরীক্ষা যদি হাসপাতাল থেকে হতো তাহলে তিনটি দিন প্রায় বিনা চিকিৎসায় ছেলেকে সারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকতে হত না।”
অথচ করোনা সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ার কারণে জয়মাল্যর মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতদেহ ছাড়ার সময় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক দেবযানী দত্তের দেওয়া শংসাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান মানস বাবু। তাঁর অভিযোগ “ আমার ছেলের যে নিউমোনিয়া আছে তা আগে কোনও চিকিৎসক জানাননি। অথচ প্রত্যেকদিন রোগীর অবস্থা জানিয়ে দিতেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। আবার ওখানকারই চিকিৎসক ডি দত্ত বলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। কোনটা বিশ্বাস করবো বলুন? ” তিনি আরও বলেন “ করোনা হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন ৮ তারিখ ছেলের করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সেই সময় চিকিৎসকদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলেকে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বললে শেষপর্যন্ত তাঁকে সেখানে পাঠানো হয়নি।”