প্রদীপ নারায়ণ রায়ঃ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি আসনে ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। তিনটি কেন্দ্রেই লড়াই হবে তিন মুখী। অর্থাৎ বাম কংগ্রেস জোট তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে। এখন দেখার এই তিন দলের প্রার্থীদের ভোট ভাগ্য কোন দিকে যায়। বলা বাহুল্য মুর্শিদাবাদের মানুষের নজর কেড়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। আজকে সেই জেলার দুই কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুরে হচ্ছে নির্বাচন। প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন হঠাৎ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল বাম-কংগ্রেস জোট।
আরও পড়ুনঃ সকাল ন’টা পর্যন্ত কোথায় কত ভোট পড়ল?
এর আগেও বাম কংগ্রেস জোট হয়েছিল। কিন্তু সেই জোট পূর্ণতা পায়নি। কারণ বামেদের ভোট কংগ্রেস প্রার্থী যতটা পেয়েছিলেন পক্ষান্তরে বাম প্রার্থীরা কিন্তু কংগ্রেসের ভোট ততটা পাননি। কিন্তু কেন এমন ঘটেছিল? আসলে বাম আমলে অত্যাচারিত কংগ্রেসীদের অত্যাচারের স্মৃতি যতটা টাটকা ছিল কংগ্রেস আমলে অত্যাচারিত বাম সমর্থকদের অত্যাচারের স্মৃতি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। ফলে বামেদের পক্ষে যতটা সহজে কংগ্রেস প্রার্থীকে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল কংগ্রেসদের অনেকের কাছেই তত সহজে বাম প্রার্থীদেরকে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। সেই ফাঁকটা পূরণ হয়েছিল সাগরদিঘী উপনির্বাচনে আর তার ফলাফল কি হয়েছিল তা দেখেছেন রাজ্যবাসী।
মুর্শিদাবাদ
এই কেন্দ্রে এবারে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী মোঃ সেলিম। তিনি বর্তমানে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক। অর্থাৎ প্রার্থী হিসেবে যথেষ্ট হেভি ওয়েট। বামেরা সেলিমের মত হেভি ওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়েছেন।
তাঁরা আন্তরিকভাবে সেলিমের হয়ে খাটছেন। অর্থাৎ এই কেন্দ্রে বাম কংগ্রেস জোট প্রকৃতই সার্থকতা লাভ করেছে। প্রার্থী হিসেবে হেভি ওয়েট হওয়াটা যেমন সেলিমের প্লাস পয়েন্ট তেমনি সুবক্তা হিসেবে ও তাঁর খ্যাতি তার পক্ষে একটা বড় সুবিধা। মানুষ ভাবছে সুবক্তা সেলিম সংসদে এলাকার সমস্যা যথাযথভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। এর আগে ওই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সংসদ আবু তাহেরকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় নি। যদিও তাঁর শারীরিক অসুস্থতা এক্ষেত্রে বড় প্রতিকূলতা হয়েছিল। পাশাপাশি নিজের দলেই তাঁর প্রতি বিরোধিতা ও স্থানীয় মানুষের হাজার অভিযোগে এবার ব্যাকফুটে তাহের।
গত বিধানসভায় ধর্মীয় মেরুকরণভিত্তিক ভোটাভুটিতে গৌরীশঙ্কর ঘোষ মুর্শিদাবাদ বিধানসভা থেকে জিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সমগ্র লোকসভা এলাকাতে তাঁর কোন পরিচিতি নেই। নেই কোন বুথ ভিত্তিক সংগঠন। বিধানসভা ভোটের সময় মেরুকরণের হাওয়াও এখন স্থিমিত। তাই বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে খুব জোরালো লড়াই দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জঙ্গিপুর
এই কেন্দ্রে বাম কংগ্রেসের জোট প্রার্থী মুর্তজা হোসেন ( বকুল)। তরুণ এই প্রার্থীর সবচেয়ে বড় পরিচিতি তিনি পুরাতন কংগ্রেস নেতা আব্দুস সাত্তারের নাতি। কৃষিমন্ত্রী থাকার সময় যাঁর হাত ধরে এ রাজ্যে সবুজ বিপ্লব এসেছিল সেই সাত্তার সাহেব একসময় এই জেলায় জনপ্রিয়তম কংগ্রেস নেতা ছিলেন। এই জেলার বহু ছেলেকে তিনি কৃষি দপ্তরে চাকরি দিয়েছিলেন। পারিবারিক পরিচিতিতে মুর্তজার পক্ষে একটা বড় প্লাস পয়েন্ট।
নিঃসন্দেহে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি। সন্দেহ নেই তৃণমূলের নেতাদের সামগ্রিকভাবে যে ভাবমূর্তি তাদের থেকে তিনি ব্যতিক্রম। কিন্তু এলাকার একটা বড় অংশের ভোটাররা তৃণমূলের দ্বিচারিতা ধরে ফেলেছেন। সেই বড় অংশই হল বিড়ি শ্রমিক। খলিলুর রহমান একজন বিডি শিল্পপতি। দল একদিকে পয়সাওয়ালা দেখে বিড়ি শিল্পপতিদের প্রার্থী করবে আর তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলবেন এ যেন সোনার পাথর বাটি। দলের এই সাপের গালে চুমু খাওয়া আবার ব্যাঙের গালেও চুমু খাওয়া। এই দ্বি-চারিতা মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী স্বল্প পরিচিত। তাছাড়া গত বিধানসভা ভোটের সময় মেরুকরণের হাওয়াকে সংগঠিত রূপ দেওয়ার জন্য যে সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার দরকার ছিল তার জন্য কোনও উদ্যোগ নেয়নি দল। ফলে ঢাল তলোয়ারহীন বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
(লেখক প্রাক্তন শিক্ষক, মতামত ব্যক্তিগত)