দ্রোহকালে তৃণমূলের একুশে জুলাই মমতারও পরীক্ষা

Social Share
একুশে জুলাই- এর ব্যানার

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ চলতি বছরও শহিদ দিবস পালিত হবে ধর্মতলায়। শনিবার সেই সংক্রান্ত একটি বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠক থেকে বেড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ” এবার ধর্মতলায় একুশে জুলাই মঞ্চে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের ভিড় হবে। জেলা থেকেও বহু মানুষ এবারেও ভিড় জমাবেন শহিদ দিবসে।” তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব সরকারও বলেন, ” সবার কাছে একুশের জুলাইয়ের তাৎপর্য তুলে ধরবার কথা বলা হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। সেই মতো প্রচার করা হবে। আশা করছি এবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে জেলার কর্মী সমর্থকরা ভিড় করবেন ধর্মতলায়।”

২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের পর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বস্তরে হুঁশিয়ারি দিয়ে দলীয় পদ থেকে প্রশাসনিক পদ বদলে ফেলা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। দলে থেকে যাঁরা দল বিরোধী কাজ করেছেন তাঁরাই ছিলেন মূলত সেদিন তাঁর লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু বছর ঘুরতে চলল এখনও কোথাও জেলা কমিটি তৈরি হয়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে দলেই। মাস খানেক আগে অধিকাংশ জায়গায় জেলা কমিটির মাথাদের এক রেখে দু-এক জায়গায় বদলানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি বলেই দাবি। মুর্শিদাবাদের একাধিক ব্লকে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে মারামারি থেকে হানাহানি একপ্রকার রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এইভাবে দল চললে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলে দাবি করছেন দলেরই বহু নেতা।

এমনিতেই একুশের জুলাইয়ের পোস্টার, ব্যানারে অভিষেকের ছবি না থাকায় দলের মধ্যেই গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। সেই গুঞ্জনে ছেদ টেনে রাজ্যের শীর্ষ নেতারা দাবি করেছেন ” অভিষেকের ইচ্ছেতেই তাঁর ছবি দেওয়া হয়নি প্রচারে।” একাংশের অবশ্য যুক্তি ” দিদিই দলের মুখ। তাঁর কথাই শেষ কথা। এখানে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বলে কিছু নেই। এগুলো সুবিধামতো দলের লোকেরাই প্রচার করে। তারই ছাপ প্রচার পত্রে।”

এদিন তৃণমূলের সভার শুরুতে রাজ্যবাসীর নজর ছিল বীরভূমের অনুব্রত মন্ডলের দিকে। সভা শেষে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিককে কু-কথা বলার অভিযোগে অনুব্রতকে লাস্ট ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আর এক নেতা মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীরকেও বিধানসভার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দল বিরোধী মন্তব্য না করার জন্য। ফি বছর হুমায়ুন কবীর রেজিনগর ও তাঁর ভরতপুর বিধানসভা আসন থেকে বহু মানুষের জমায়েত করেন বলে একাধিকবার দাবি করেছেন। তাঁকে এদিন ফোন করলে স্বর খাদে রেখে জেলা নেতৃত্বের কোর্টে বল ঠেলে হুমায়ুন বলেন, ” আমার ব্যক্তিগত বিষয় তো নয় এটা। নেতৃত্ব যেমন বলবে তেমন জমায়েত হবে।”

২০২৬ এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কাছে পঁচিশের একুশে জুলাই পরীক্ষারও। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের প্রশাসন ও শাসকের বিরুদ্ধে বাংলার সর্বস্তরের মানুষকে এমনভাবে বিরোধীতা করতে দেখা যায়নি। অথচ গত প্রায় দেড়বছর ধরে তাই ঘটছে এই রাজ্যে। তরুণী চিকিৎসক হত্যাকান্ড থেকে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ এমনকি মুর্শিদাবাদে ঘটে যাওয়া হিংসার ক্ষত আজও শুকোয়নি। মহেশতলার ঘটনা সেই ক্ষতকেই উসকে দিয়েছে। আর এই সব ঘটনাই রাজ্যের পুলিশ ও দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে দাবি শাসক দলের একাংশেরও। আর সেই সব সামলে মানুষের দুয়ারে আগামী কুড়ি দিন তৃণমূল নেতারা কী প্রতিশ্রুতি দিতে যাবেন তা শুনতেই মুখিয়ে আছেন মানুষ। সেই রিপোর্ট কার্ডের ওপর ভিত্তি করেই ভোটের নক্সা তৈরি করবেন মমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights