
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বুধবার সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেন। কিন্তু শুরু থেকেই সেই বিলের বিরোধীতায় নেমেছে বিরোধীরা। বিরোধী দলের খাতায় কংগ্রেসের সঙ্গে নাম লিখিয়েছে এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।
মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তি। সেই সম্পত্তির পরিমাণ কত তার লিখিত হিসেব কোথাও নেই। শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সেই সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগ আবার ভুয়ো বলে তা খারিজ করতে ও পারেন না শাসক দলের নেতারা। তাই কি জেলার সাংসদ আবু তাহের খান,খলিলুর রহমান ও ইউসুফ পাঠানকে বুধবার একটি শব্দও ওয়াকফ বিলের বিরোধীতায় সংসদে বিতর্ক চলাকালীন খরচ করতে দেখেনি দেশ।
এর আগে এই জেলার প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীকে সংসদে মোদী সরকারকে যুক্তি দিয়ে নিয়মিত সমালোচনা করতে দেখা যেত। বিরোধীতা করেও নরেন্দ্র মোদীও তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় সেই স্বর আর শোনা যাচ্ছে না।
সন্ধ্যার ফিরতি ট্রেন ধরতে বহরমপুর স্টেশনে বসে সেই প্রসঙ্গ তুললেন বেলডাঙার বাসিন্দা সামিম শেখ। তাঁর বক্তব্য, ” অধীর চৌধুরী হেরে না গেলে আজ সংসদে তাঁকেই গলা ফাটাতে দেখতে পেতেন মুর্শিদাবাদবাসী। কিন্তু বর্তমান সাংসদরা এখনও সংসদে নেতা হয়ে উঠতে পারেননি।” বিরোধীদের দাবির সুরে সামিমের দাবি, ” আমি কোনও মন্দির কমিটিতে ঢুকতে যদি না পারি, তাহলে মুসলিমের সম্পত্তিতে অন্য ধর্মের মানুষ কেন নাক গলাবেন? অধীর দা ঠিকই বলেছেন।” তাঁরই পাশে বসে সামিমকে সমর্থন করছেন সমবয়সী চল্লিশোর্ধ আর এক যুবক তৌফিক আহমেদ। তাঁর বিরোধীতার তীর তৃণমূলের দিকে। তৌফিকের দাবি, ” তৃণমূল এখন ওষুধে দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে নেমেছে। সংসদরাও তাই বলবেন। অথচ জেলায় ওয়াকফ সম্পত্তি বেহাতু হলেও ওদের কোনও হেলদোল নেই।”
রাত পোহালে মুর্শিদাবাদ জেলার ব্লকে ব্লকে ওয়াকফ বিল বিরোধিতায় নামছে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরীর নির্দেশে এই কর্মসূচি পালন করবে তাঁর দল বিকেল তিনটের পর। তারই প্রস্তুতি শুরু করেছে কংগ্রেস। অধীর বলেছেন, ” এই বিল এনে মুসলিমদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার আইন তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। এর মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য বাড়বে। বিভাজন বাড়বে। নির্বাচন আসার আগে এইভাবে বিভাজনের আইন তৈরি হবে।”
যদিও তৃণমূল পুজোর সময়েই ব্লকে ব্লকে ওয়াকফ বিলের বিরোধীতা করেছে। জেসিআই কমিটির কাছে বেশ কিছু সংশোধনীও তুলে ধরা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। বুধবার সংসদে সরব ছিলেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান। কিন্তু সাধারণ মানুষদের দাবি, দানের জমি, বাড়ি এই আমলে দখল হয়ে যায়। সেগুলি সংরক্ষণ করে সমাজের কাজে লাগানোর কথা। অথচ অনেক জায়গাতেই তা বিক্রি হয়ে যায় শাসক দলের অঙ্গুলী হেলনে।
তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ” তৃণমূল এই বিল বাংলায় আইনে পরিণত হতে দেবে না।” অথচ পাড়ায় পাড়ায় এখন তাঁরা ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে নামছেন। ওয়াকফ বিলে ফেরানোর প্রতিবাদ কর্মসূচি এখন তাঁদের নেই। অপূর্ব বলেন, ” বিধানসভায় এই বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। প্রস্তাবে এনে বিলের প্রয়োজনীয় সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। তখন অবশ্য কংগ্রেসকে দেখা যায়নি।” অধীরকে খোঁচা দিয়ে ডেভিড বলেন, ” অধীর চৌধুরী এখন কুমিরের কান্না কাঁদছেন। ওঁকে সংসদে মোদি বিরোধীতা করতে দেখেনি কেউ।”