
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ কেন্দ্রের নতুন আইনে ক্ষতিপূরণ দিলে তবেই দেওয়া হবে চাষের জমি। এই দাবিতেই অনড় ছিলেন জমির মালিক। কিন্তু মালিককে কোম্পানি নির্ধারিত দামের অধিক এক পয়সাও দিতে নারাজ ওই বেসরকারি সংস্থা। এই নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে জল গড়াল কলকাতা হাইকোর্টে। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সারগাছি এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারগাছি স্টেশনে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একটি গোডাউন তৈরি করবে। সেই গোডাউন তৈরির জন্য তেলেঙ্গনার একটি ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা সারগাছি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ওই গোডাউন তৈরির জন্য স্থানীয় জমি মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনতে উদ্যোগী হয় ২০২২ সালে।
তাদের মধ্যে এক জমি মালিক তন্ময় ও মৃন্ময় মন্ডলের চাষযোগ্য ২৫ শতক জমিও তারা কিনতে চায় কিন্তু ওই পরিবারের পক্ষ থেকে পরিস্কারকে ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয় ২০১৩ সালে কেন্দ্র সরকারের নতুন ক্ষতিপূরণ আইন অনুযায়ী তাঁদের জমির দাম দিতে হবে। কিন্তু সেই দাম জমি মালিককে দিতে নারাজ কোম্পানি। উল্টে তাদের ধার্য দামেই সেই জমি দিতে হবে বলে জমি মালিকদের নানানভাবে চাপ দেয় বলে জানান জমি মালিক মৃণ্ময়।
মন্ডল পরিবারের ওই জমি কেন প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ? সূত্রের দাবি, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার খাদ্য শস্য আধুনিকভাবে সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য সাইলো প্রকল্পে সারাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর গোডাউন তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্পের বিশেষত্ব, রেল লাইন পাতা থাকবে গোডাউনের ভিতর পর্যন্ত। খাদ্যশস্য বোঝাই মালগাড়ি এই গোডাউনের ভিতরে ঢুকে গিয়ে আনলোডিং করবে। সেই গোডাউন তৈরি হবে সারাগাছিতে। যেখানে তা তৈরি হবে সেখানেই জমি রয়েছে মন্ডল পরিবারের।
কিন্তু জমির দাম নিয়ে কোম্পানির মালিক ও জমি মালিক পরস্পর রাজি না হওয়ায় জমির মালিক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ২০২২ সালে। সেই সময় বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে ফুড করপোরেশন ও ওই ঠিকাদার সংস্থা জানিয়ে দেয়, ওই জমি তাদের প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন নেই। কিন্তু ২০২৪ সালে ফের জমি চেয়ে জমি মালিককে চিঠি দেয় ঠিকাদার সংস্থা। সেবারও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে পরিবার।
মৃন্ময়ের অভিযোগ, ” এবার চাপ বাড়াতে জেলা প্রশাসনের সাহায্য নেয় ওই ঠিকাদার সংস্থা। প্রথমে ওই জমি সংলগ্ন গোটা এলাকায় সাবেক ১৪৪ ধারা জারি করায় ওই ঠিকাদার সংস্থা। আশপাশের সব জমি খুঁড়ে সেই মাটি আমাদের জমিতে ফেলে জমির ফসল নষ্ট করছে।” তারপরেও নতুন আইনে জমি অধিগ্রহনের দাবি থেকে না সরায় এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগে সংস্থাটি অভিযোগ দায়ের করে বেলডাঙা থানায়। তার আগে অবশ্য জমি নিয়ে একপ্রস্থ শুনানিও হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক ( ভূমি ও ভূমি সংস্কার ) এর দফতরে। এই মাসের ২১ তারিখ ফের শুনানি আছে। তারমধ্যে মন্ডল পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে বেলডাঙা থানায়
মৃন্ময়ের আইনজীবি অরিন্দম দাস বলেন, “পুলিশ সেই অভিযোগ পাওয়ার পরেই এফআইআর করে। পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এবং অভিযোগ দায়েরের পিছনে আসল ঘটনা উল্লেখ করেই মামলা হল হাইকোর্টে।” বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসের আগামী মঙ্গলবার সম্ভবত মামলার শুনানি।