শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সব প্রান্তের স্কুলগুলিকেই পুরস্কৃত করে ওই এলাকার মানুষের পরোক্ষে মন টানার চেষ্টা কি না তা নিয়ে অবশ্য জল ঘোলানো চলছেই।

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ দুর্গা পুজোর ধাঁচে গত তিন বছর ধরে শহরের স্কুলগুলিকে সরস্বতী পুজোয় পুরস্কৃত করছে বহরমপুর পুরসভা। চলতি বছরেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় পাঁচটি স্কুল সহ শহরের ১৪টি স্কুলকেই পুরস্কৃত করেছে পুরসভা। তালিকায় আরএসএস পরিচালিত লাধুরাম তোষনিওয়াল সরস্বতী শিশু মন্দিরও আছে। আর সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পুরসভা খরচ করেছে লক্ষাধিক টাকা।
নারী নিরাপত্তাকে থিম করে পুজো মন্ডপ সাজিয়েছিল শ্রীশ চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। বিচারকদের বিচারে ওই স্কুল প্রথম হয়েছে। তাদের হাতে পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বুধবার সন্ধ্যায় নগদ ২৫ হাজার টাকা ও একটি স্মারক তুলে দিয়েছেন। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল ও বহরমপুর জেএনএকাডেমি স্কুল। দুটি স্কুলকেই নগদ ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার ও একটি স্মারক দেওয়া হয়েছে। লিপিকা মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল ও চালতিয়া শ্রীগুরু পাঠশালাকে যুগ্ম তৃতীয় ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের হাতে বুধবার চেয়ারম্যান নগদ দশ হাজার টাকা ও একটি করে স্মারক তুলে দিয়েছেন।
যদিও পুরসভার এই কর্মযজ্ঞের অন্যতম দুই কাউন্সিলর আবুল কাওসার ও জয়ন্ত চক্রবর্তী আগে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান ঘোষণা করেছিলেন। শেষ মুহুর্তে চেয়ারম্যানের নির্দেশে ঘোষিত চতুর্থ ও পঞ্চমের স্থান বদল হয়েছে বলে জানান কাওসার। অন্যদের একটি করে স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় আরও ছটি পুরসভা থাকলেও সরস্বতী পুজোর আয়োজকদের পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বহরমপুর পুরসভাই। পুরসভার মিটিং হলে আয়োজিত পুরস্কার দেওয়ার মঞ্চে পুরপ্রধানের মুখে ছিল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূয়সী প্রশংসা। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সব প্রান্তের স্কুলগুলিকেই পুরস্কৃত করে ওই এলাকার মানুষের পরোক্ষে মন টানার চেষ্টা কি না তা নিয়ে অবশ্য জল ঘোলানো চলছেই।
শেষ লোকসভা নির্বাচনে অন্য পুরসভার মতো বহরমপুর পুরসভার মানুষ ফিরিয়েছে তৃণমূলকে। যদিও বহরমপুর লোকসভা আসনটি তারা জিতেছে। রাজ্যের অন্য এলাকার মতো মুর্শিদাবাদের কংগ্রেসও ক্ষয়িষ্ণু। হাতে থাকল বিজেপি। সেখানেও বিধায়ক সুব্রত মৈত্র ও তার দলের সভাপতি শাখারভ সরকার বিপরীতমুখী দলগত কারণেই। স্বাভাবিকভাবে বহরমপুরের মতো বহু আকাঙ্খিত একটা বিধানসভা আসন ফাঁকা থাকার দরুণ তৃণমূল হাত পা ছড়িয়ে খেলতে চাইছে।
তার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শহরের একমাত্র বেসরকারি স্কুল হিসেবে কাশিমবাজারের আরএসএস পরিচালিত স্কুলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মত।জেলার কোথায় কী হচ্ছে তাঁরা কে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা বড় বড় ব্যাপার পুরসভা এলাকার দায়িত্ব যে চেয়ারম্যানের তা এদিন পরিস্কার যেমন করেছেন পুরপ্রধান। তেমনি শহরের স্কুলগুলিতে নিজেদের দলের প্রতিনিধিদের বসিয়ে সেই সব স্কুলের সঙ্গে জড়িত সমাজের একটা বৃহত্তম অংশের মানুষকে তৃণমূলমুখী করবার একটা উদ্যোগ কি না চেয়ারম্যানের প্রায় কুড়ি মিনিটের বক্তব্যে তাও পরিস্কার হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতির কারবারীরা।