
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃদলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। এই সময়ের মধ্যে যে বিধায়করা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি চাইছেন প্রতি পদের জন্য পছন্দের তিনজন করে নাম তাঁরা পাঠাবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে। সেই নাম দেখে মমতা সিদ্ধান্ত নেবেন স্থানীয় স্তরে দলের ভার কার কাঁধে রাখবেন। মুর্শিদাবাদ জেলার উত্তর দক্ষিণ দুই অংশের বিধায়কদের একাংশ আগের পাঠানো তালিকা থেকে নাম কেটে ফের নতুন তালিকা পাঠিয়েছেন বলে দল সূত্রে জানা যায়।
তারমধ্যে মুর্শিদাবাদ দক্ষিণের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, নওদার বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান, তালিকায় আছেন জীবনকৃষ্ণ সাহাও। প্রত্যেকেই নিজের নিজের পছন্দের নাম পাঠিয়েছেন বলে বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়। হুমায়ুন ও সাহিনা দুজনেই অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকার স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাঁরা নতুন নাম পাঠিয়ে বুক বাঁধছেন আশায়।
মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের কুড়ি জন বিধায়ক আছেন। কোথাও না কোথাও বিধায়কের সঙ্গে সেই এলাকার অঞ্চল সভাপতি বা ব্লক সভাপতি কোথাও আবার দলের ওই দুই পদাধিকারীর সঙ্গেই বিরোধ রয়েছে বিধায়কের। আর সেই বিরোধিতাই জন্ম দিয়েছে গোষ্ঠীর। তার ঢেউ লেগেছে জেলায়। তার জেরে শাসক দলের সমালোচনার সুযোগ পেয়েছে সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দল।
এই অবস্থা নতুন নয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তৃণমূলের অন্দরে মাথাচারা দিয়েছে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব । আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে দলকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার একটা আভাস মিলতে পারে আগামী ২৭ তারিখ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচন মিটে গেলে দলের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত রদবদলের সিদ্ধান্তের কথা একুশে জুলাই মঞ্চেই জানিয়েছিলেন। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে হাজার হাজার কিউসেক জল। আজ হবে, কাল হবে, এখন নয় তখন, এমাসে নয় ওমাসে করে সাত মাস পার হতে চললো, দল যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে ‘দিদি’ রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফের দলে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানতোর।
মুর্শিদাবাদের দুটি বিধানসভা বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিধায়ক না থাকায় সেখানকার দলের চেয়ারম্যানরা তাঁদের পছন্দের অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতিদের নাম দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠাবেন বলে জানান বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার। যদিও ২৭ তারিখের সভার পর রমজান মাসের প্রস্তুতি শুরু হবে। এক নেতার কথায় ” উৎসবের মরশুমে দলে পরিবর্তন দিদি চান না। তাই আমার ধারণা এই রদবদল যদি হয় তাহলে ইদের পর। তখন আবার পয়লা বৈশাখ এসে যাবে।” তাঁর মতে “একেবারে নির্বাচনের মুখে দলকে ভোটমুখী করতে দিদি রদবদল করবেন।”
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অন্যতম সদস্য অধীর চৌধুরী অবশ্য বিধায়কদের স্থানীয় নেতার নাম পাঠানোকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “ ক্ষমতায় টিকে থাকতে নেতারা খাল কেটে উপরের নেতাদের মাল পাঠাবে। তাই চারদিকে তোলা তোলার রব উঠেছে।” তার প্রতিবাদ করে অপূর্ব বলেন, “ আমাদেরকে নিয়ে ওঁর অতো মাথাব্যাথা কিসের? উনি শুধু বোম, বারুদ, টাকা এইসব শব্দগুলিই জানেন।“ ১৯৯৯ সালের আগে থেকে এই মুর্শিদাবাদ জেলার গরু পাচার হয়। আর ১৯৯৯ সাল থেকে মুর্শিদাবাদের সাংসদ অধীর। সে কথা জানিয়ে অপূর্ব আরও বলেন, “ ষোল, সতেরো বছর পর ওঁর মনে হল তৃণমূল টাকা খায়। তখন তো দলটাই ছিল না। তাহলে তখন কার বাড়িতে কার পকেটে যেত সেই টাকা। আমি জীবনে ভাবিনি সভাপতি হবো। কাউকে চা খাওয়াতে হয়নি। উনি এগুলো বলছেন বিজেপিকে খুশি করতে।”