জেলা পরিষদ সদস্য শিক্ষক অশেষের হাতে বাজছে স্কুলের ঘন্টা

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ সকাল ন’টা নাগাদ শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে “যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে”র পক্ষ থেকে চিন্ময় মন্ডলরা যখন ঘোষণা করছেন ” আমরা স্বেচ্ছাশ্রম দেব না” তখন কীভাবে স্কুল চালাবেন সেই চিন্তা নিয়ে বাড়ি থেকে স্কুলের দিকে পা বাড়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা। এক প্রধান শিক্ষক খেদের সঙ্গে বলেন, ” নামধাম লিখবেন না ধরে নিয়েই বলছি, আমাদের আর কোনও মর্যাদাই থাকল না। প্রধান শিক্ষক হয়ে শুধু যেদিকে জল পড়ে সেদিকেই ছাতা ধরতে ছুটতে হচ্ছে। দু-দন্ড জিরোবার অবসরও নেই।”

ওদিকে চিন্ময়রাও বিভ্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যে কোনও দিশা দেখতে পাননি তাঁরা। এসএসসি চেয়ারম্যান, বোর্ডের সভাপতি, শিক্ষাদফতরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা হাজির না থেকে মঞ্চে কি না এলেন সাহিত্যিকরা। কেন ? সেই প্রশ্নও রয়েছে “যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে”র সদস্যদের। তাঁরা বলছেন, ” অযোগ্যদের ভিড় আমাদের আটকাতে হচ্ছে। আমাদের খুঁজে দিতে হচ্ছে অযোগ্যদের। পুলিশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” চিন্ময় বলছেন, ” এখনও আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। সরকারের দুর্নীতির জন্যই আমাদের এই জায়গায় আসতে হয়েছে। সেটা সরকার মানছে না। বিরোধীরাও আমাদের নিয়ে খেলছেন। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করিনা। যাঁরা আমাদের কথা বলবেন আমাদের ন্যায্য বিচারের কথা বলবেন আমরা তাঁদেরকেই সমর্থন করব।”

এমন সময় শোনা গেল, বহরমপুর ব্লকের রাঙামাটি চাঁদপাড়া অঞ্চলের গোবিন্দপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অশেষ ঘোষ ঘন্টা বাজিয়ে ক্লাস শুরুর ঘোষণা করছেন। অশেষ শুধু এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকই নন, তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে তৃণমূলের দু’বারের সদস্যও। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ২০১০ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। পড়ুয়ার সংখ্যা একশো তিন জন। চলতি বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণি বাদ দিয়ে ওই স্কুলে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে।

শুরুর দিন থেকেই এই স্কুলে শিক্ষক সংকট। স্কুলের পঠন পাঠন শুরু হয়েছিল অতিথি শিক্ষক দিয়ে। পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও সাধারণ বদলির মাধ্যমে দু’জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা হয়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খায়রুল আলমের মৃত্যু হয়। এপ্রিলের তিন তারিখ শীর্ষ আদালতের রায়ে ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বাতিলের তালিকায় রয়েছেন এই স্কুলের একমাত্র শিক্ষাকর্মী বিশ্বজিৎ দাস। তিনি না থাকায় স্কুলের দরজা খোলা থেকে ঘন্টা বাজানো সবই অশেষকে করতে হচ্ছে একা হাতে।

হাতের নাগালে আছেন দু’জন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। বেশ কয়েকবার জেলা শিক্ষাভবনে শিক্ষক চেয়ে ধর্ণা দিতে হয়েছে অশেষকে। তার ফলে মিলেছে এই দুই শিক্ষক। সরকার সাধারণ পাস স্নাতকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে কোথাও নিয়োগ করলে পাঁচ হাজার টাকা সাম্মানিক দেয়। আর সাম্মানিক স্নাতক হিসেবে ওই পদে মেলে সাত হাজার টাকা। সেই চুক্তিতে স্কুলের শ’খানেক ছাত্রদের তাঁরা গত মাস থেকে হাল ধরতে না ধরতেই শীর্ষ আদালতের “মাথাায় বাজ পড়া” রায়ে ফের একবার শূন্য হাত অশেষের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বিশ্বজিৎকে কাজে যোগ দিতে ডেকেছেন অশেষ। বিশ্বজিৎও তাঁকে পূর্ণ আশ্বাস দিতে পারেননি জানিয়েও অশেষের আশা তিনি কাজে যোগ দেবেন।

এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে একজন ও ভাষা বিভাগে দু’জন শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে। বারবার বলা সত্ত্বেও শিক্ষাভবন কিছুই করতে পারেনি বলেও আক্ষেপ অশেষের। তাঁর দাবি, ” ওবিসি জটিলতাতেও শিক্ষক নিয়োগ আটকে গিয়েছে। কিন্তু এইভাবে একলা হাতে ক্লাস নেওয়া থেকে মিড ডে মিল খাওয়ানো সবকিছু সামলানো মুশকিল। এতদিন তো তবু বিশ্বজিৎ ছিল। সেও চলে গেল।” কার ভুলে? সে ব্যাপারে অবশ্য মুখে খুলছেন না ভারপ্রাপ্ত ও একমাত্র শিক্ষক তৃণমূলের অশেষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights