বছর তিনেক আগের নভেম্বরে সেবার মুর্শিদাবাদে বসে হাজারদুয়ারিকে কেন্দ্র করে জেলার পর্যটনকে ঢেলে সাজানোর যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পর্যটন সচিব সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল চলতি বছরেও।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পরপর দু’বছর মুর্শিদাবাদের দুটি গ্রাম কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রকের কৃষি-পর্যটন প্রতিযোগিতায় ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’-এর তকমা পেয়েছে। নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী ও জিয়াগঞ্জের বড়নগর। কিন্তু পর্যটনের মরশুমে সেদিকে নজরই পড়ল না পর্যটকের। তারা ভিড় জমালেন সেই লালবাগেই। তাও হাজারদুয়ারি প্যালেস কতৃপক্ষ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পয়লা জানুয়ারি মাত্র পনের হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
অথচ পর্যটনে স্বনির্ভর হবে জেলা, এই স্বপ্ন দেখিয়েছিল রাজ্যের সরকার তাও বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালের শেষে যখন করোনার অন্ধকার কাটছে, সেই সময় বহরমপুরে সার্কিট হাউসে বসেছিল সচিব পর্যায়ের বৈঠক। সেই বৈঠক হয়েছিল বর্তমান স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে। নন্দিনী এখনও রাজ্যের পর্যটন বিভাগ সামলান। কিন্তু বছর তিনেক আগের নভেম্বরে সেবার মুর্শিদাবাদে বসে হাজারদুয়ারিকে কেন্দ্র করে জেলার পর্যটনকে ঢেলে সাজানোর যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পর্যটন সচিব সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল চলতি বছরেও।
মুর্শিদাবাদ পৌরসভার পুরপ্রধান ইন্দ্রজিৎ ধর বলছেন, ” যে ভিড় দেখছেন তা কিছুই নয়। এর বেশিরভাগই স্থানীয় মানুষজনের ভিড়। হোটেল তো ফাঁকাই গেল। এর আগে বহু মানুষ বছর শেষ ও শুরুর দিনগুলোতে বেড়াতে আসতেন এখানে। সেই ভিড় আর হয় না।” অথচ বছর শেষের দিন সাতেক আগে পৌরসভার উদ্যোগে হাজারদুয়ারি উৎসব হয়ে গেল। সেখানেও স্থানীয় মানুষজনেরই উপস্থিতি ছিল। তাঁর দাবি, “একজন মানুষ তিনদিনের জন্য ঘুরতে এলে একদিনেই ঘুরে ফেলছেন মুর্শিদাবাদ, বাকি দুদিন হোটেলের ঘরে বসে থাকলে কী করে উৎসাহ থাকে ইতিহাসের প্রতি?”
মুর্শিদাবাদ জেলা হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য, মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের এর সাধারণ সম্পাদকও। এদিন তিনি বলেন, ” বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ নিয়ে একটি ট্যূর প্যাকেজের কথা আলোচনা হয়েছিল। পুরো জেলা না হোক মানুষ অন্তত ইতিহাসের জায়গাগুলো দেখতে পেলে আগ্রহ জন্মাত জেলার প্রতি। ইতিহাসের সংরক্ষণও যেমন হতো তেমনি পর্যটন শিল্পও গড়ে উঠত। সেসব প্রস্তাব খাতায় কলমেই থেকে গেল। বাস্তবে আর হল না।”
শুধু এই জেলা নয়, সরকারের পরিকল্পনায় মুর্শিদাবাদ ও মালদহকে নিয়ে পর্যটন সার্কিট তৈরির কথাও ছিল। তা নিয়ে বিজ্ঞাপণের বহর যত ছিল পর্যটন তত নেই বলছেন ইতিহাসপ্রেমী মানুষজনই। এরজন্য প্রয়োজন ছিল একটি ডেভলেপমেন্ট অথরিটির। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলা সেই দীঘাই হোক কি পুরুলিয়া সবজায়গাতেই আছে। অথচ মুর্শিদাবাদে সেই কমিটি গড়েই ওঠেনি এতদিনে। স্বপনের ক্ষোভ, ” দীঘায় সমুদ্র সৈকতের প্রতি মানুষের এমনিই আকর্ষণ আছে। সেখানে সরকার তিনশো কোটি টাকা খরচ করে জগন্নাথ মন্দির তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের জেলায় পর্যটনকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগের প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সেখানেই হাত গুটিয়ে রাখছে।”