দুর্নীতির পাঁকে নবাব নগরী, নাকে রুমাল পর্যটকের

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুরনোকে বিদায় ও নতুনকে আহ্বানের ডাকে বছরের শেষ দু’দিন যখন পর্যটক ডানা মেলেছে হাজারদুয়ারিতে, ঠিক তখনই দুর্নীতির গন্ধ তাল কাটল পিকনিকের ডিজে।

মুর্শিদাবাদ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৃণমূলের বিপ্লব চক্রবর্তী সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ২৮ কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান তৃণমূলেরই ইন্দ্রজিৎ ধর। শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির পাঁকে ডুবে থাকার নিরন্তর অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু বেড়াতে এসে তৃণমূলেরই প্রাক্তন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বর্তমান পুরপ্রধানের অভিযোগ শুনে নাকে রুমাল দিয়ে বছরের প্রথমদিন মির্জাফরের জেলা ছাড়লেন ভিন জেলার মানুষজন।

২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন বিপ্লব। সেই সময়েই এই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ইন্দ্রজিতের। প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে একশো কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ইঞ্জিনিয়ার সহ পাঁচ পুরকর্মীকে বরখাস্ত করেছে মুর্শিদাবাদ পুরসভা। তাঁরাও প্রাক্তন পুরপ্রধানের নির্দেশেই দুর্নীতি হয়েছে বলে লিখিতভাবে পুরপ্রধানকে জানিয়েছেন।

কোন খাতে এই দুর্নীতির অভিযোগ পুরপ্রধানের ? আবাস থেকে সড়ক যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই নাকি দুর্নীতি। মানুষকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে আগের তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলেরই পুরবোর্ডের বর্তমান পুরপ্রধানের। তিনি বলেন, ” সেই সময় যাদের ঘর দেওয়া হয়েছিল তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের কোনও অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। সেলফ চেক দেওয়া হয়েছে।  ডিএলবির তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে।  আর এতো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরও অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের আত্মীয় থেকে ঘনিষ্ঠদের সুবিধা দিয়েছেন। তদন্ত হলে সব পরিস্কার হবে।”

প্রাক্তন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বর্তমান পুরপ্রধানের অভিযোগ নিয়ে সরব দলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিধায়ক অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। তিনি বলেন, ” আমাদের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সে দলের যেই হোক না কেন ? বিষয়টি নিয়ে আমি যতদূর জানি দফতর থেকেও তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে বলেও শুনতে পাচ্ছি।”

বিপ্লব বলছেন, ” পেলাম ৪৬ কোটি টাকা আর তছরূপ হল ২৮ কোটি টাকা ? তাহলে নিকাশীনালা, রাস্তা সহ পুরপরিষেবা দশ বছর ধরে মানুষ পেল কী করে ? আসলে এর পিছনে যে ষড়যন্ত্র আছে তা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।” আর এই ঘটনার আবহেই ফিরেছে বিপ্লব ও ইন্দ্রজিতের পুরনো দ্বন্দ্ব, দাবি মুর্শিদাবাদ পুরবাসীর।

বিপ্লব মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান ঘনিষ্ঠ বলেই শাসক দলে পরিচিত। ২০২২ সালে পুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনে এসেছিল দলের বহরমপর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা আবু তাহের ও শাওনী সিংহ রায়ের দ্বন্দ্ব। তখন দলের চেয়ারম্যান আবু তাহের অন্যদিকে শাওনী ছিলেন দলের সভাপতি। বিপ্লব ঘনিষ্ঠদের দাবি, ” আগে ছিল শাওনীর সঙ্গে লড়াই এখন সেই জায়গায় এসেছেন অপূর্ব। চরিত্র বদলেছে কিন্তু ষড়যন্ত্রের ছক বদলায়নি।”

এদিন যা শুনে ডেভিড বলেন, ” প্রশাসনের কাজ প্রশাসন করবে। এরসঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। সঠিক তদন্ত হলেই স্বচ্ছ না অস্বচ্ছ তা প্রমাণ হয়ে যাবে।” ইন্দ্রজিৎ বলেন, ” চোরের মুখ থেকে কী ধর্মের কথা শুনতে হবে? সরকারিভাবে সব তথ্য আমাদের কাছে । আমরা নিজের চোখেও সে সব দুর্নীতি দেখেছি।” এই বিষয়ে আবু তাহের খান বলেন, ” অভিযোগ উঠেছে। প্রমাণই তো হয়নি। তবে বিচারাধীন এই বিষয়ে এর বেশি কিছু বলছি না।”

উল্লেখ্য, বিপ্লবের পরে ২০২২ সালে নির্বাচনে জিতে মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ললিতা দাস নন্দী। তার ১৫ মাস পরে শাওনী ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিত ওই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বর্তমান চেয়ারম্যান সহ অন্যরা। পরে সর্বসম্মতি ক্রমে পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বসেন ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ ধর। এসব শুনে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শান্তিপুরের তাঁত ব্যবসায়ী তাপস চক্রবর্তী বললেন, ” রাজ্যের যেখানেই যাই সেখানেই শোনা যায় তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে আর এক নেতার অভিযোগ। আসলে বিরোধী শূন্য রাজ্যে শাসকই শাসকের বিরোধী, যা নজিরবিহীন তো বটেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights