পাসপোর্ট যাচাই করবেন পুলিশ সুপারঃ ডিজি

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভিন দেশে যেতে গেলে দেশের ছাড়পত্র চাই। সেই ছাড়পত্রের পোশাকি নাম পাসপোর্ট। অভিযোগ, সেই ছাড়পত্র বা পাসপোর্ট পেতে হয়রান হতে হয় সাধারণ আবেদনকারীকে। জেলায় পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য জমা দেওয়া তথ্য যাচাই করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিস্ট্রিক্ট ইনটিলিজেন্স ব্রাঞ্চ (ডিআইবি)। সেখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি।

অভিযোগ, উৎকোচের বিনিময়েই নাকি তথ্যে গলদ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ছাড়পত্র পেয়ে যান আবেদনকারি। পাসপোর্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের যখন এই মনোভাব, তখনই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে রবিবার পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, “রাজ্যের সীমান্তের বিশেষ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে যাচাই প্রক্রিয়া সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যক্তিগতভাবে পাসপোর্ট যাচাই করবেন জেলা পুলিশ সুপার।”

মুর্শিদাবাদের এক প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক বলেন, ” পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ডিআইবির দুটি কাজ। এক আবেদনকারী ভারতীয় কি না তা যাচাই করা। আর দ্বিতীয়ত সে অপরাধী কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া।” ওই আধিকারিক আরও বলেন, ” অপরাধী কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ২৪ ঘন্টা সময়ও পুলিশের লাগে না। কিন্তু ভারতীয় কি না তা প্রমাণ করতে বেশ কিছু তথ্য লাগে। অনেক সময় আবেদনকারীর কাছে সব তথ্য থাকে না সেই সময় পুলিশকে অনুরোধ করলে পুলিশ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।”

ওই জেলায় কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ” ডিআইবিকে এখন সিভিকের উপর নির্ভর করতে হয় কর্মী অভাবেই। সেই এলাকা থেকে খোঁজখবর এনে দেয়। সে আবার সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করে তথ্য ঠিক না ভুল তা জানার চেষ্টা করে। আগের মতো ডিআইবি-র সেই নেটওয়ার্কও নেই যে সঠিক তথ্য জোগার করবে।”

এদিকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না রাজ্য পুলিশ। সেই অনুপ্রবেশকারী যদি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকে পরে তাহলে সে মুর্শিদাবাদের মতো বাংলাদেশ ঘেঁষা জেলায় আস্তানা তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে পঞ্চায়েত এলাকায় আশ্রয় খোঁজে। সেখানে এসে কিছু সময় পরে সে বিয়ে করে।

বৈবাহিক সম্পর্ক দেখিয়ে তৈরি হয় রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ডও। আর সেই সব কাজে পঞ্চায়েত সদস্যের সহযোগিতা থাকে বলেও অভিযোগ করেন জেলার ওই পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, “এরপর ওই সব নথি দিয়েই তৈরি হয় বৈধ পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টই হয়ে ওঠে ভারত বাংলাদেশ পারাপারের অন্যতম আইনি অস্ত্র, সে জঙ্গিই হোক আর সাধারণ ছাপোষা মানুষ। হিসেব সবার ক্ষেত্রেই এক।”

জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তি শাদ রাদি গ্রেফতারের পর দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানা এক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করলে জানা যায় বাংলাদেশে তার বাবার নাম মহম্মদ ইব্রাহীম আর ভারতে বাবার নাম নওশাদ আলি। শুক্রবার ছ’জন ভুয়ো পরিচয় পত্র দেখিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সূত্রে জানা যায়। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির সেই সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাদের তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকি তিন জনের এখনও হদিশ পাওয়া যায়নি।

মুর্শিদাবাদের মতো মালদা সীমান্ত দিয়েও বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ হচ্ছে। বিশেষ করে অস্থির বাংলাদেশের কারণেই ইদানিং অনুপ্রবেশ বেশি হচ্ছে বলে বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের মাথারা স্বীকার করছেন। সেক্ষেত্রে উঠে আসছে অরক্ষিত সীমান্তঞ্চল নিয়েও হাজার অসুবিধার কথা। মুর্শিদাবাদে সীমান্ত এলাকা ১২৫ কিলোমিটার। কিন্তু সব জায়গায় কাঁটাতার নেই। প্রায় তিরিশ কিলোমিটার মতো সীমান্তে কোনও কাঁটাতার নেই। সেই এলাকাই হয়ে ওঠে অনুপ্রবেশের করিডর।

এদিন জঙ্গী দমনে রাজ্য পুলিশের পক্ষ নিয়ে ডিজি বলেন, “সীমান্তের নিরাপত্তা দেখভাল করে বিএসএফ। আমরা যা খবর পাই, তা সীমান্তরক্ষা বাহিনীকে দিই। এর মাঝেও অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে। তাতে বোঝা যায় নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর রয়েছে।” তবে সাধারণ মানুষকে কৃতিত্ব দিয়ে রাজীব বলেন, ” আপনাদের শান্ত, নিশ্চিন্ত থাকতে হবে, আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড দারুণ। বাংলাদেশের অশান্তির সুযোগ কেউ নিতে পারবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights