নেপথ্যে তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই? না কি ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বছর শেষে অস্বস্তি বাড়ল বহরমপুরে। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শাসক দলের যুব নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটল পরপর দু’রাউন্ড গুলি। সেই ঘটনায় শাসকদল ও কংগ্রেসের মধ্যে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ চললেও নাগরিক সমাজের প্রশ্ন শহরের নিরাপত্তা নিয়েই। ঘটনাটি ঘটেছে কাশিমবাজার এলাকার রিংরোডে। আতঙ্কিত বহরমপুর শহর যুব তৃণমূল সভাপতি পাপাই ঘোষের দাবি, “আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। সেই সময় আমার চারচাকা গাড়ি লক্ষ্য করে রাত পৌনে বারোটা নাগাদ পরপর দুটি গুলি চলে।” যদিও সেই ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হয়নি। পুলিশ যুবনেতার গাড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সকালেও ঘটনাস্থলে গুলির খোল পরে থাকতে দেখা যায়।
এই বছরই কোজাগরি লক্ষ্মী পুজোর দিন ভোরে দুষ্কৃতিদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন তৃণমূল নেতা প্রদীপ দত্ত। জমি বাড়ি সংক্রান্ত পুরনো বিবাদ থেকেই এই ঘটনা বলে শাসকদল দাবি করেছে। তার রেশ কাটতে না কাটতে ইন্দ্রপ্রস্থের মতো জনবহুল এলাকায় খুন হয়ে যান এক টোটো চালক। তাছাড়া চুরি ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে। শনিবার রাতের ঘটনার পর শহর দুষ্কৃতিদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে বলে দাবি করছেন তৃণমূলের বিরোধীরাও।
পাপাই পেশায় একজন ঠিকাদার। তাঁর স্ত্রী মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁর সঙ্গে সবসময় সশস্ত্র দেহরক্ষীও থাকেন। তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে না কি ব্যবসায়ীক বিবাদ তা এখনও স্পষ্ট নয়। বহরমপুর থানার আইসি উদয় শঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, ” থানায় এখনও লিখিত অভিযোগ জমা পরেনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” পাপাই অবশ্য কাউকে সন্দেহ করছেন না বলেও দাবি করেন। বলেন, “চোখে দেখিনি কাকে সন্দেহ করব? এই এলাকা শান্তিপ্রিয় এলাকা। এইরকম ঘটনা ঘটবে জানতাম না।”
রাজনৈতিক কারণে তাঁকে ভয় দেখাতে বা প্রাণনাশের চেষ্টাতেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর অনুমান। তাঁকে প্রাণে মারতেই দুষ্কৃতিরা গুলি চালিয়েছে কি না তা অবশ্য তদন্তের বিষয় বলে জানিয়েছে বহরমপুর থানার পুলিশ। তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের একটা সম্ভাবনা রয়েছে। পাপাই যুব তৃণমূলের বহরমপুর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে বছর দুয়েকের কাছাকাছি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শহরের ছেলে পঞ্চায়েতে গিয়ে ক্ষমতা পাচ্ছে। ছড়ি ঘোরাচ্ছে। তাই নিয়ে মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েত এলাকার একটা বড় অংশের পাপাইকে নিয়ে ক্ষোভও তৈরি হয়েছিল সম্প্রতি। তার জেরেই এই ঘটনা কি না তা নিশ্চিত নয় পুলিশ।
বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ও এই ঘটনার পেছনে সঠিক কী কারণ তা বলতে পারেননি। তবে তাঁর অনুমান, ” প্রয়াত কাউন্সিলর প্রদীপ নন্দী এলাকার অভিভাবক থাকাকালীন কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ওই এলাকা পরে কংগ্রেসের বাহুবলীদের হাতে চলে যায়। কংগ্রেসের হিরু হালদার, বিজেপি’র ভক্তি হালদাররা এলাকা শাসন করে। ওখানে তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলেও পাপাইয়ের মতো যুব নেতারা সেখানে সংগঠনকে শক্তিশালী করছে। মানুষ কংগ্রেস থেকে তৃণমূলের ওপর বেশি ভরসা রাখতে শুরু করেছে। এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে কংগ্রেসীরা এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়।”
জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস তাঁকে এই প্রসঙ্গে ‘সাপুড়িয়া’ বলে কটাক্ষ করেন। বলেন ” সাপুড়িয়ার ঝুড়িতে বিষধর সাপে ভরে গিয়েছে দেখে সাপুড়িয়া নিজেও চিন্তিত। তাই এইসব বলছেন।” তিনি বলেন, ” শনি থেকে মঙ্গল শহরের সব দুষ্কৃতি নাড়ুগোপালের হাতের তালুর আশ্রয়ে আছেন। তাই উনি দাপটহীন কংগ্রেসকে টেনে এনে নিজেকে শাপমুক্ত করতে চাইছেন।” কংগ্রেস এই ঘটনার পেছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ি করছে। জয়ন্তর দাবি, “এই পাপাই ঘোষরা ওই এলাকায় মানুষের সমর্থন না পেয়ে পঞ্চায়েতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনেও মানুষ আমাদের পক্ষে ছিলেন। একটা সময় জঙ্গি সংগঠন ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে গিয়ে দু’টুকরো হয়ে যায় যেমন, তেমনি পাপাই বাহিনীও দুভাগে বিভক্ত হয়ে এক বাহিনী আর এক বাহিনীকে আঘাত করছে।”
তিনি আরও বলেন, ” বহরমপুর ও তার আশেপাশের দুষ্কৃতিদের একটা বড় অংশ বহরমপুরে আস্তানা নিয়েছে শহরকে দুষ্কৃতিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করতে। এর আগেও কুঞ্জঘাটা এলাকায় দুটো খুনের ঘটনা ঘটেছে এই আমলেই।” নাড়ুগোপাল সেই অভিযোগ মানতে চাননি। উল্টে বলেন, ” কংগ্রেসের দুষ্কৃতিরাজ নিয়ে বহরমপুরবাসীকে নতুন করে চেনাতে হবে না। সেই তুলনায় এখানে আইনের শাসন রয়েছে। টোটো চালকের খুন হওয়া একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাছাড়া অন্য কোনও বড় অপরাধ হয়নি এখানে। তবে এটা ঠিক বহরমপুরে চুরি অনেক বেড়েছে। পুলিশকে আরও একটু নিজেদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে।”