বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ককে মালদহে ত্রাণ দিতে বাধার অভিযোগ

Social Share
পারলালপুর হাইস্কুলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় সুব্রত ও তার অনুগামীরা

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মালদহের কালিয়াচক তিন ব্লকের পারলালপুর হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন শমসেরগঞ্জ হিংসার ঘটনায় ভীত ওই এলাকার ঘরছাড়ারা। বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র তাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন পারলালপুরে। কিন্তু বিধায়কের অভিযোগ, সেই ত্রাণ নিয়ে তাঁকে শিবিরে ঢুকতে দিতে বাধা দিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন। বেশ খানিকক্ষণ পুলিশ ও বিডিও-র সঙ্গে তর্কাতর্কির পর তাঁরা শিবিরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পেরেছেন বলে অবশ্য জানিয়েছেন সুব্রত।

বৃহস্পতিবার সকালে সুব্রত ও তাঁর অনুগামীরা বহরমপুর থেকে ট্রাকভর্তি খাবার দাবার নিয়ে মালদহের কালিয়াচক গিয়েছিলেন। চাল, ডাল, পোশাকের সঙ্গে ছিল ৭০ কেজি মাছ, দুধের প্যাকেটও। বিধায়কের অভিযোগ, ” এই রোদে মাছ ও দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ওরা চেয়েছিল আমাদের খাবারগুলো নষ্ট হয়ে গেলে ওরা বলতে পারবে আমারা পচা খাবার দিয়েছি। কিন্তু সেই সুযোগ তারা পায়নি। আমারা ব্যবস্থা করে গিয়েছিলাম।” তিনি এও বলেন, ” শরণার্থীদের পোকা লাগা চালের খিচুড়ি খেতে দিচ্ছে প্রশাসন। মানবিকতাহীন প্রশাসন লজ্জাটুকুও তৃণমূলের পায়ে শপে দিয়েছে।” তাঁর দাবি ” আমি কি এখানে রাজনীতি করতে এসেছি ? এসেছি স্বজাতের মানুষদের ভুখা পেটে খাবার তুলে দিতে। এই বোধ ওদের নেই।”

শমসেরগঞ্জে হিংসার ঘটনার জেরে “আক্রান্ত হিন্দুরা” ঘর ছেড়ে যেদিন নদী পেরিয়ে মালদহের ওই স্কুলে আশ্রয় নেন সেদিন থেকেই তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন বিধায়ক, দাবি তাঁর অনুগামীদের। তাঁরাই চাঁদা তুলে এই ত্রাণ সংগ্রহ করেন। সেগুলিই পৌঁছে দিতে মালদহে গিয়েছিলেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ” ওই এলাকার তৃণমূলের বিধায়কই হোক বা নেতা কাউকে শরণার্থীরা শিবিরে ঢুকতে দেননি। তাই পুলিশ ও বিডিওকে দিয়ে আমাদের কাজে বাধা দিতে পাঠিয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, ” প্রশাসনের চেয়ারে বসে থাকা দলদাস আধিকারিকরা আমাদের দেওয়া খাবার শরণার্থীদের কাছ থেকে চুরি করে নিচ্ছে। এই অভিযোগ ছিল বলেই আমাদের বারবার বলা সত্বেও ওদের হাতে ত্রাণ ছেড়ে দিইনি। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে স্বজাতিকে ত্রাণ দিয়ে এসেছি। ওরা বাধ্য হয়েছে আমাদের পথ ছাড়তে।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে এডিজি দক্ষিণবঙ্গে সুপ্রতীম সরকার বলেন, ” অনেকেই শমসেরগঞ্জের হিংসার ঘটনায় এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। ৮৫ জন বাড়ি ফিরে এসেছেন। যাঁরা চলে গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশি প্রহরায় তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় রাজ্য পুলিশের ক্যাম্প রয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। তাঁরা যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে তারজন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী আজ কালকের মধ্যে বাকি ঘরছাড়ারা ফিরে আসবে। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”

তবে বিধায়ক সুব্রত বলেন অভিযোগ, ” রাজ্যপাল আসার আগে এলাকা ছাড়া মানুষগুলোকে রাতের অন্ধকারে সরিয়ে দিতে চাইছে প্রশাসন। দেখাতে চাইছে সবাই ঘরে ফিরে গিয়েছে। এলাকায় শান্তি ফিরেছে। কিন্তু আদৌ তা হয়নি। শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শে আজ রাত্রে ওই শিবিরে আরও বিএসএফ পাঠানো হচ্ছে। যাতে ত্রাণ শিবিরের কাউকে প্রশাসন বা তৃণমূল রাতের অন্ধকারে কোথাও সরাতে না পারে। অনুপ্রবেশকারীদের জন্য আমরা আজ তিরিশ শতাংশে এসে পৌঁছেছি।”

তবে মালদহ দক্ষিণের বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক তৃণমূলের চন্দনা সরকার অবশ্য বলেন, ” এ ব্যাপারে যা বলার প্রশাসনই বলতে পারবে। আমরা ওদিকে যাচ্ছিও না। তাই বলতেও পারব না কী হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights