‘অনপেক্ষিত’ নাটক হয়েও হয়ে উঠতে পারেনি

Social Share

দীপক বিশ্বাসঃ গত ৯ ডিসেম্বর মেঘলা শীতে ঋত্বিকের ২৪ তম দেশ-বিদেশের নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিনে শিলিগুড়ি ঋত্বিক নাট্য সংস্থার ‘অনপেক্ষিত’ প্রযোজনা দেখলাম। এই আকালে মঞ্চে ২২ জন কুশীলবের স্বতঃস্ফূর্ত শরীরী উপস্থিতি নিঃসন্দেহে নাট্যানুরাগীদের খুশি করে। নাট্যকার প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সমকালীন রাজনীতির দলিল চিত্রাঙ্কন করতে চেয়েছেন। নিঃসন্দেহে ভালো প্রয়াস। কিন্তু দলিল এবং নাটকের মধ্যে যে বিস্তর যোজন ফারাক থাকে তা হয়তো তিনি বিস্মৃত হয়েছেন । নাটক তো শৈলী দাবি করে যেহেতু একটা আর্ট ফর্ম । তাই ‘অনপেক্ষিত’ নাটক হয়েও হয়ে উঠতে পারেনি। সাব প্লট মুখ্য প্লটকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে সহায়কের ভূমিকা নেয়। কিন্তু সাবপ্লট প্লটকে ছাপিয়ে যায়না এবং তা গেলে নাটক ক্ষুণ্ণ হয় এবং নাট্যরস বিঘ্নিত হয় ।

যে শিক্ষক সুযোগ সন্ধানী, বিন্দুমাত্র মূল্যবোধের ধার ধারে না,ভাঁড়ামি করে,হঠাৎ করে সে কেমন সংগ্রামী মানুষ হয়ে গেল। কোন রকমের প্রক্রিয়া ছাড়া । বা ঘাত প্রততিঘাত ছাড়া।কোন প্রকার দ্বন্দ্বের ধার ধারে না। কোন মানসিক বা বাহ্যিক কনফ্লিক্ট তৈরী হয়না।কেমন যেন ফিল্মিও রসাসিক্ত ব্যাপার হয়ে যায়। সিমেন্ট বালি সমস্ত উপাদানই ছিল কিন্তু গাঁথনিতে বড় দুর্বল।

নির্দেশকও তেমন কোন উত্তরণ ঘটাতে পারেনি তার মুন্সিয়ানায়। কম্পোজিশন বড় দুর্বল। বিশেষত কীর্তনের দৃশ্যে। বেশি সংখ্যক পাত্র-পাত্রী থাকলে কোন বিন্যাসে প্রত্যেককে দৃশ্যমান করা যায় তা তিনি করতে অক্ষম হয়েছেন। আলোয় দু তিন জায়গায় চোখে পড়ার মতো দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ম্যুড ধরার আগেই ঝপ করে কেটে গিয়েছে, দ্বিজেন্দ্র গীতির একটি পঙক্তি “ভাইয়ের মায়ের এত স্নেহ” ‘(জন্মভূমি কবিতার মধ্য অংশ )দিয়ে এক লাইনে সবাইকে দাঁড়িয়ে আশাবাদী প্রত্যাশায় শেষ করা বড্ড ক্লিশে । জ্বলন্ত সমাজ চিত্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা হলো না শৈল্পিক গুণাভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights