
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একশো বছরের বেশি সময় ধরে নিজস্ব ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হয়েছে সংগঠন। সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে গিয়ে বাধা এসেছে যত, ব্যপ্তি বেড়েছে তত। দুয়ো দিয়েও ভরসা রাখতে ভোলেনি বিরোধীরাও। বহরমপুর জেএন একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোমনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ” সমগ্র এশিয়া মহাদেশে প্রথম শিক্ষক সংগঠন হিসেবে আবির্ভাবের গৌরব ধারণ করে আছে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি।”
শিক্ষক- শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষা সংকট কাটাতে এই সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী। আর ১৯৬৭ সালে বহরমপুর জেএনএকাডেমির কাছে সেই সমিতির স্থায়ী মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যালয় ‘রামেন্দ্র সুন্দর ভবন’ তৈরি হয়েছে। জেলার শিক্ষা আন্দোলনকে সেই সময় এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী সত্যপ্রিয় রায়, সন্তোষ ভট্টাচার্য, সুধীন সেনের মতো সেই আমলের প্রথম সারির শিক্ষক নেতারা।
কালের নিয়মে সেই ভবন একদিকে যেমন দূর্বল হয়েছিল তেমনি অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় এখানে জায়গা কম পড়ছিল সমিতির কাজকর্মের জন্য। এই দুই কারণে বছর দুয়েক আগে কার্যালয় পুননির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো পুরনো কার্যালয় ভেঙে চারতলা নতুন এই ভবনটি নির্মাণ হয় বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। তারজন্য একটা বড় অংশের অর্থের জোগান দিয়েছেন সংগঠনের শিক্ষক সদস্যরাই। বিপুল ব্যায়ে অবশেষে তৈরি হয়েছে শিক্ষক সংগঠনের আধুনিক কার্যালয়। যা নজিরবিহীন। রবিবার সেই কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুকুমার পাইন।
যখন এই ভবন পুননির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন সংগঠনের জেলা সম্পাদক ছিলেন দুলাল দত্ত। তিনি বলেন, ” এই ভবনে আগামী দিনে একটি ছাত্র সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পড়ুয়ারা সব দিক থেকে যাতে উন্নত মানের পড়াশোনা করবার সুযোগ পায় তারজন্য সেখানে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ পাঠাগার থাকবে।” যে শিক্ষকরা তাদের তৈরি করবেন তাঁদের কথাও ইতিমধ্যে ভেবে ফেলেছেন সমিতির কার্যকর্তারা, দাবি ওই শিক্ষক নেতার। সুকুমার জানিয়েছেন, তাঁরা সমীক্ষা করে গড়ে তুলতে চাইছেন এই জেলার শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ভাণ্ডার।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা কার্যালয়ের শহীদ সন্তোষ ভট্টাচার্য স্মৃতি হল যা এবিটিএ হল নামেই বেশি পরিচিত। ছোটখাটো সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার জন্য ভাড়াও পাওয়া যেত সেই হল। পুননির্মিত এই ভবনে সেই হলের ঠাঁই হয়েছে একেবারে ওপর তলায়। কিন্তু সন্তোষ ভট্টাচার্য স্মৃতি কক্ষ অনেক শিক্ষকেরই পছন্দ হয়নি। ওই কক্ষের জায়গা কমেছে বলে তাঁদের মনে হলেও দুলাল দত্ত বলেন, ” প্রেক্ষাগৃহের উচ্চতা কুড়ি ফুট, আগের তুলনায় আসন সংখ্যা বেশি। এই হলে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম এমনকি এসিও থাকবে। আগের তুলনায় এই কক্ষ ব্যবহার করা আরও আরামদায়ক হবে।”
সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শিক্ষকদের নৈতিক স্খলন নিয়ে সমাজে প্রশ্ন উঠছে, অর্থের বিনিময়ে পেশা হিসেবে সমাজের একাংশের মানুষ শিক্ষকতা বেছে নেওয়ার অভিযোগে শিক্ষার গায়ে যখন কালির দাগ লেগেছে এ বাংলায়, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সংগঠনের সভাপতি জুলফিকার আলি বলছেন, ” শিক্ষকতা একটি নিছক পেশা নয়, একটি মহান ব্রত।” আর এই সংগঠন হয়ে উঠতে চাইছে ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ভরসা স্থল। যা অন্ধকারে রূপালি রেখার মতো দেখায়।