
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ শুধু দেবলিনা হেমব্রমের ক্ষেত্রেই সিপিএম মত বদলেছে এমন নয়। বছর তিনেক আগে সময়ের দাবি মেনে মুর্শিদাবাদে জামির মোল্লার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল সিপিএম। জামিরই মুর্শিদাবাদ জেলায় সিপিএমের সম্পাদক হিসেবে প্রথম সংখ্যালঘু মুখ। সেই ভরসা রাখতে পেরেছেন তিনি। এরিয়া সম্মেলন শেষ করে কাল শনিবার রঘুনাথগঞ্জে বসছে সিপিএমের দুদিনের ২৪ তম জেলা সম্মেলন। সেই সম্মেলন থেকে ফের জামিরের কাঁধে ভর করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইতে নামতে চলেছে দল। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা যায়।
২০২২ সালে জানুয়ারি মাসে বহরমপুরে জেলা সম্মেলনে মুর্শিদাবাদ জেলায় দলের দায়িত্বে জামিরকে এনে চমক দিয়েছিল সিপিএম। তার আগে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক ও রাজ্য সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন জামির। জেলায় যুব সংগঠনের দায়িত্ব যখন ছিল জামিরের তখন রাজ্যে বাম শাসন চললেও রাজ্য সম্পাদক জামিরের মেয়াদ ফুরিয়েছে তৃণমূলের আমলেই। সেই হিসেবে মুর্শিদাবাদ জেলায় নৃপেন চৌধুরী, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যরা যে সময় দল চালিয়েছেন সেই তুলনায় রাজ্যে ক্ষমতায় না থেকে দল চালানো স্রোতের বিপরীতে চলারই নামান্তর। তবু জামির সামলেছেন।
দায়িত্ব নিয়ে দলের সক্রিয় সদস্যদের লেভি আদায়ে জোর দিয়েছিলেন তিনি। সত্য ভবনে কান পাতলে শোনা যায়, মোটা অঙ্কের লেভি আদায় হয়েছে জামিরের আমলে। দলের রোজগেরে সদস্যদের আয়ের ওপর নির্ভর করে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক চাঁদা ধার্য্য করা হয় দলের পক্ষ থেকে। সেই টাকা বহু সদস্যদের বকেয়া পড়েছিল। কিন্তু লেভি আদায় না হলে দল চালানো মুশকিল হয়। লেভি দেওয়ায় চাপ দিলে সদস্য পদ ছেড়ে দিতে পারেন বলে অনেকে আশঙ্কাও করেছিলেন। যদিও জামির এদিন দাবি করেন, ” সবাইকেই লেভি দিতে হয়। লেভি না দেওয়া এমন কেউ নেই। তাই সদস্য পদ ছাড়ার কথাও নেই।” উল্টে তৃণমূলের জোয়ারেও সিপিএম প্রায় হাজার খানেক নতুন সদস্য দলে টানতে পেরেছে বলে দলীয় সূত্রেই জানা যায়।
মূল দল সিপিএমের দলীয় কর্মসূচি রূপায়নে এখনও ভরসা দলের তরুণ ব্রিগেড। তাদের একটা বড় অংশকে এবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নিয়ে আসার ভাবনাও রয়েছে জেলা নেতৃত্বের। শুধু সোমনাথ ভট্টাচার্য, আভাস রায়চৌধুরী কিংবা মহঃ সেলিমের নয় বামফ্রন্টের জেলা আহবায়ক হিসেবেও জামিরের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে শরিক দলেও। ফরোয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য স্বরূপ দেব বলেন, ” তরুণ নেতা হিসেবে বামফ্রন্টের শরিকদলগুলোকে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে লোকসভা নির্বাচনে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দিয়েছে জামির।”
তবে বছর তিনেক পরেও সিপিএমের জেলা গণ সংগঠনগুলি তেমনভাবে সক্রিয় হয়নি। শিক্ষক সংগঠন বাদ দিলে অন্য সংগঠনগুলো এখনও তুলনায় দূর্বল। মহিলা নেত্রীই নেই জেলায়, যাকে সামনে রেখে এগোতে পারে মহিলা সমিতি। জেলায় কোনও মজবুত ছাত্র সংগঠন নেই। নেই আইনজীবিদের সংগঠন। যা কিছু হয়েছে সবই যুব সংগঠনের দৌলতে। করোনা পরবর্তী সময়ে ইনসাফ যাত্রা থেকে মহঃ সেলিমের ভোট প্রচার, তাঁদের সদলবলে অংশ গ্রহণ সিপিএমকে ডিফিডেন্ড দিয়েছে অন্য সময়ের তুলনায় ঢের বেশি। জামির অবশ্য বলেন, “সবই রয়েছে পরিকল্পনার স্তরে।”
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল বামফ্রন্ট। সেই জোটের দুই উদ্যোক্তার একজন সিপিএমের মহঃ সেলিম যদি হয় তাহলে অন্যজন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। ২০২১ পরে সাগরদিঘির উপনির্বাচন কিংবা পঞ্চায়েত যেদিকেই তাকানো যায় সিপিএমের তুলনায় জনপ্রতিনিধি বেশি পেয়ে লাভের কড়ি ঘরে তুলেছে কংগ্রেস। আর তা নিয়ে নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও জন্মেছে। কংগ্রেসের নেতা বদল হয়েছে রাজ্যে। আগামী দিনে বঙ্গ রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেস একসঙ্গে লড়বে না কি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বে তা এখনই বলার সময় নয়। তবে “২০২৬-এ দলকে লড়াইয়ে রেখে জেলায় যত ভাল ফল ভাল করা যায়” আপাতত এটাই জামিরের লক্ষ্য।