বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ বড়ঞার মানুষ চলতি লোকসভায় অধীর চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন নির্মল সাহাকে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ প্রায় সব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন এলাকাবাসী। তবু শেষতক ঘাসফুলের থেকে পদ্ম ফুলেই তাঁরা ভরসা পেয়েছেন বেশি। গত লোকসভা নির্বাচনে ঘাস আর হাতের তুল্যমূল্য লড়াইয়ে জয় হয়েছিল হাতের। এবারও তৃণমূলকে ফিরিয়েছেন বড়ঞাবাসী। ২৩৩ বুথের এই বিধানসভায় ২৭টি বুথে একশোর কম ভোট পেয়েছে শাসকদল।
এই বিধানসভায় ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার ভোট কম পেয়েছেন অধীর। আর বিজেপি’র নির্মল সাহা পেয়েছেন ৬২ হাজার ৯১৮টি ভোট। ২০১৯ সালে বিজেপি এই আসন থেকে ভোট পেয়েছিল ২৯ হাজার ৯০২ ভোট। আর অধীর চৌধুরী পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৫১৩ভোট। এবার পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৬৪ ভোট। এখানেও হিন্দু ভোট ভাগ হয়েছে কংগ্রেস, বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। তৃণমূল লোকসভায় ভোট পেয়েছে ৬২ হাজার ৯১৮। অথচ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জীবনকৃষ্ণ সাহা ৮১ হাজার ৮৯০ ভোট পেয়েছিলেন । সেই ভোট কমেছে লোকসভায়।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গতবছর এপ্রিলে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। ১৭ এপ্রিল প্রায় ৬৫ ঘন্টা জেরা চালিয়ে গভীর রাতে বিধায়ককে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রের গোয়েন্দারা। বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনের পরের দিন জামিনে ছাড়া পান বিধায়ক। বড়ঞায় ফিরেছেন তারও দিন তিনেক পরে। ততক্ষণে ইভিএমে রায় দান সেরে ফেলেছেন বড়ঞাবাসী। রণক্ষেত্রে ছিলেন না কিন্তু জয়ের উদযাপনে দলীয় কার্যালয়ে হাজির ছিলেন জীবন। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় তিনি ধরা পড়লেও তাঁকে নিয়ে অবশ্য খুব বেশি হইহই রইরই ছিল না জেলা নেতাদের। প্রথম সারির নেতাদের চোখে ছিল জীবনের প্রতি মাপা দৃষ্টি। মন্তব্য এড়িয়ে বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড বলেন, “বিধায়কদের ব্যাপারে যা বলার রাজ্য বলবে।”
জীবন বলেন, ” আমি তৃণমূলের বিধায়ক। আমার সঙ্গে ডেভিড দা’র দশ থেকে বারোবার কথা হয়েছে। কখনও মনে হয়নি দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বিচারাধীন অবস্থায় আছি তাই স্বাভাবিক, কেউ কেউ সেই কারণেই এড়িয়ে যাবেন।”
বাড়ি ফিরে জীবন এখনও সক্রিয়ভাবে দলের কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তাঁর কথায়, ” বাড়িতে বসেই সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে যখন তাঁদের দরকারে আসছেন তাঁদেরকে সাধ্যমত সহযোগিতা করছি।” তার বেশিরভাগটাই বিভিন্ন ব্লক কিংবা পঞ্চায়েত থেকে আসা মানুষজন। যাঁদের দরকার বিধায়কের দেওয়া একটি শংসাপত্র। সে কলেজে ভর্তিই হোক আর প্যান কার্ড বা আধার কার্ড তৈরির জন্যই হোক।
তিনি আরও বলেন, “বুথ স্তরের কর্মীরা আসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। প্রয়োজনে ডেভিডদা’র সঙ্গে কথা হয়। বিধানসভা যেতে হয়।” ভোটের ফলাফল নিয়ে জীবনের দাবি, ” আমাদের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসকে হারানো। সেই লক্ষ্য সফল হয়েছে। আমরা আর একটু পরিশ্রম করলে হয়ত আরও ভাল ফল হত।”
আরও পড়ুনঃ সেলিমের মুখরক্ষা শুধু রানিনগরে