বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ জনতাকে পুঁজি করে মুর্শিদাবাদ লোকসভা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন বাম কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু এবারও খালি হাতেই তাঁদের ফিরিয়েছে সেই জনতাই। সাতটি বিধানসভার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই শূন্যতা। ছ’টি বিধানসভার কোথাও কোথাও পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল হয়েছিল জোটের। সেই ফলের ভরসায় স্বপ্ন অধরা থাকলেও মুখ রেখেছে একমাত্র রানিনগর বিধানসভা। একুশের তুলনায় ২৪এ ভোটের হারও বেড়েছে এখানে।
এই বিধানসভার ২৭০টি বুথ থেকে সেলিম পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৪৮৩টি ভোট। মুর্শিদাবাদ লোকসভায় জয়ী সাংসদ আবু তাহের খানের থেকে মাত্র ৭৯৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। এছাড়া বাকি ছয় বিধানসভার মধ্যে একমাত্র জলঙ্গিতে কিছুটা লড়াই করেছে বাম-কংগ্রেস জোট। করিমপুর, মুর্শিদাবাদের মত বিধানসভায় বিজেপি, সিপিএমকে তিন নম্বরে ঠেলে দিয়েছে। মুর্শিদাবাদ বিধানসভায় সেলিম ২৮১টি বুথের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন ১৫৮ নম্বর বুথে, ৭১৭টি। করিমপুরেও প্রায় তাই।
রানিনগরেও যে খুব ভাল জায়গায় সেলিমরা ছিলেন তা নয়। তবে লড়াই হয়েছে তৃণমূল আর জোট প্রার্থীর মধ্যেই। দুটি ব্লকের একটি পেয়েছে তৃণমূল অন্যটি সিপিএম। প্রায় ১৬টি বুথে সেলিমের প্রাপ্ত ভোট একশো পেরোয়নি। নূন্যতম ভোট পেয়েছেন ৫৮ নম্বর বুথে ১১টি ভোট। ভোট প্রচারে এই রানিনগরেই বামেদের মিছিলে বোম পড়েছিল। নির্বাচনের দিন বুথে ভুয়ো এজেন্ট ধরে সংবাদ মাধ্যমের আলোও কেড়ে নিয়েছিল এই রানিনগরই।
আরও পড়ুনঃ ইউসুফকে বিশেষ ধন্যবাদ মমতার
রানিনগর ১ ব্লকে ছ’টি অঞ্চল। তারমধ্যে সেলিম তিনটেতে হেরেছেন আর তিনটেতে জিতেছেন। ওই ব্লকের হুড়শি অঞ্চলের চর দৌলতপুরে ছ’টি বুথ। সেখানে সবথেকে কম ৭ নম্বর বুথে ২২টি ভোট পেয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। এই এলাকার লোচনপুর, পাহাড়পুর অঞ্চলের হিন্দু প্রধান গ্রামের ভোট পড়েছে বিজেপি বাক্সে। ব্যতিক্রম টেকারায়পুর অঞ্চল। ওই অঞ্চলের রঘুনাথপুর গ্রাম মুসলিম অধ্যুষিত হলেও এখানে সিপিএম ভোট কম পেয়েছে। রানিনগর ১ ব্লকের এরিয়া কমিটির সম্পাদক ও এই বিধানসভার কনভেনর ইকবাল হক বলেন, ” ওখানে আমাদের সংগঠন নেই বললেই চলে।” যদিও পঞ্চায়েত নির্বচনে ওই গ্রাম জোটের পক্ষে ছিল।
আরও পড়ুনঃ দ্বন্দ্বের আড়ালে মৈত্রীর কৌশলেই বাজিমাত তৃণমূলের
অন্যদিকে রানিনগর ২ ব্লকের পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে চারটেতে জিতেছে বাম-কংগ্রেস জোট। তেমনি ডোমকল বিধানসভার অন্তর্গত ধুলাউড়ি অঞ্চল যা মুর্শিদাবাদ লোকসভার অন্তর্গত সেখানে হেরেছেন সেলিম। যদিও তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে রানিনগর ২ ব্লকে অস্থির শাসকদল। ফলে সাংগঠনিকভাবে ওই ব্লক থেকে তেমন ফায়দা তুলতে পারেননি বিধায়ক সৌমিক হোসেনের দল। সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “এই এলাকাতে আমরা সাংগঠনিকভাবে খারাপ অবস্থায় ছিলাম। ধারণা ছিল অনেক কম ভোট পাব। তবু শেষ পর্যন্ত মানুষ আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন।”
ইকবাল হক বলছেন, ” প্রথম থেকেই জানতাম রানিনগরের মানুষ আমাদের পক্ষে আছেন। এখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, পুলিশকে ব্যবহার করে পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ ছিলেন। তাই জিতেছি।” তাঁর আশা এই সামান্য জয় ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শাসক দলের বিধায়ক সৌমিকও বলছেন, “যেটুকু যা ভাঙাচোরা আছে তা ২৬ এর আগে রিপেয়ার করে নেব।” একুশে এই বিধানসভায় দলের প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে জোট প্রার্থী ফিরোজা বেগমকে দুয়ে ঠেলে সেবার বিধায়ক হয়েছিল সৌমিক। সেই ভোট বাক্সেও ফাটল ধরেছে চব্বিশে। তুলনামুলকভাবে বিজেপি’র ভোট ব্যঙ্কের খুব একটা নড়চড় হয়নি এই বিধানসভায়।
আরও পড়ুনঃ পুরনো মেজাজে অধীর