
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে বেলডাঙায় হিংসার ঘটনা ঘটেছিল শনিবার। ওই দিন রাতে নেতাজী পার্ক এলাকার দক্ষিণপাড়ায় বিবাদমান দুই পক্ষের ঝামেলায় মুহূর্তে নিভে গিয়েছিল উৎসবের আলো। ঠাকুর দেখতে বেড়িয়েও আতঙ্কে ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন বেলডাঙাবাসী। তার রেশ থাকল রবিবারেও। সেদিন ছিল বেলডাঙার ঐতিহ্যের কার্তিক লড়াই।
যা দেখতে ফি বছর দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে ভিড় করেন স্টেশন লাগোয়া ছাপাখানা মোড়ে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাক্ষী গোপান গণাই বললেন, “ আমাদের ছোট বেলাতেও কার্তিকের লড়াই দেখেছি। তবে কালে কালে এর বহর বেড়েছে অনেক।”

এবার সেই ঐতিহ্যেই লেগেছে হিংসার দাগ। শনিবার রাতে বিবাদমান দু-পক্ষের লড়াইয়ে আহত হয়েছে উভয় পক্ষই। পুলিশের দাবি, কেউ নিহত হয়নি, গুরুতর আহত হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন। দু-পক্ষের বিবাদ সামলাতে গিয়ে বরং পুড়েছে পুলিশের গাড়ি, বাইকও। সিভিক সহ কয়েকজন পুলিশও আহত হয়েছেন ঝামেলা মেটাতে গিয়ে। পরিস্থিতি অবশ্য হাতের বাইরে বেরতে দেয়নি সেই পুলিশই। যদিও এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে দায়ি করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

পরিস্থিতি যাতে ফের উত্তপ্ত না হয়ে ওঠে তাই সাবেক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বেলডাঙার একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায়। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। কিন্তু ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে বন্ধ করা হয়নি কার্তিক লড়াই। নির্বিবাদে সেই কার্তিক পরিক্রমা উতরোতে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তা, প্রতিবেশী জেলার পুলিশ সুপার সহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে বেলডাঙা ও তার আশপাশ।

দগদগে ক্ষত নিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে প্রশাসন। উৎসবে ফিরবার শত অনুরোধেও কিন্তু মানুষজন ‘আতঙ্ক’ কাটাতে পারেননি, নিরাপদে থাকতে এড়িয়ে গিয়েছেন উৎসবই। অশান্তি এড়াতে বন্ধ ছিল দোকানপাটও। বেলডাঙার বিধায়ক হাসানুজ্জামান চিকিৎসার কারণে কলকাতায়। তাই সদলবলে ছাপাখানা মোড়ে উপস্থিত ছিলেন রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী। তিনি অবশ্য দাবি করলেন, ” সব ঠিক আছে। কোনও অশান্তি কোথাও নেই।”
বয়েজ ক্লাবের সদস্য দীপঙ্কর প্রামাণিক বললেন, “ কালকের ওই দুর্ঘটনা না ঘটলে এই রাস্তায় মানুষের কালো কালো মাথা ছাড়া কিছু দেখা যেত না। এবার সেই ভিড় এক শতাংশও নেই।” থমথমে বেলডাঙায় পা দিয়ে লালবাগের খোশবাগের বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “গত বছরও এমন ছিল না। তবে প্রশাসন রয়েছে তো। তেমন কিছু হবে না।” রবিউল শেষ বেলায় বললেন, ” ক্ষত সারিয়ে স্বাভাবিক হতে সময় তো লাগবে।”