এক যুগ ধরে স্কুলে নেই বাংলা ও ইংরেজির শিক্ষক

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বীরভূমঃ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার শ্রীপুর জুনিয়র হাই স্কুলে পরীক্ষায় গার্ড দিতে হচ্ছে মিড মে মিল কর্মীকে।  দিন সাতেক আগের এই সংবাদে হইহই পড়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। রাজ্যের কত শত স্কুলে যে শিক্ষক নেই তার ইয়ত্তা নেই, সেই দাবিও করেছিলেন অনেকে। মুর্শিদাবাদের ওই স্কুলটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বীরভূমের কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুল । বর্তমানে স্কুলের বয়স ষোল বছর। অথচ কানাইপুর স্কুলে গত বারো বছর ধরে বাংলা এবং ইংরেজীর মতো বাধ্যতামূলক বিষয়ের কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই।

রাজ্যে ২০১৯ সালের পর আরও কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি কোথাও। ছ’বছর পর ২০২৪ সালে বহু ঝড় ঝঞ্ঝার পর শুরু হয়েছে উচ্চপ্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ। তার প্রথম পর্যায়ের কাউন্সেলিং শেষ। এখনও অনেক স্কুলে শিক্ষকের স্থান শূন্যই। স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা যায়, মেধা তালিকায় থাকা ৮ হাজার ৭৪৯ জনের কাউন্সেলিং হয়েছে। তারমধ্যে সুপারিশ পত্র নিয়েছেন ৬ হাজার ৬৮০ জন। স্বাভাবিক হিসেবে অনুপস্থিতির হার প্রায় ২৪ শতাংশ। যা গত বছরের অনুপস্থিতির হারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আবার যাঁরা কাউন্সিলিংয়ে অংশ নিয়ে সুপারিশ পত্র নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকে এখনও পছন্দের স্কুলে যোগদানই করেননি।

স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা যায়, মেধা তালিকায় থাকা ৮ হাজার ৭৪৯ জনের কাউন্সেলিং হয়েছে। তারমধ্যে সুপারিশ পত্র নিয়েছেন ৬ হাজার ৬৮০ জন। স্বাভাবিক হিসেবে অনুপস্থিতির হার প্রায় ২৪ শতাংশ। যা গত বছরের অনুপস্থিতির হারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে ফের শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাউন্সেলিং। সেদিকে তাকিয়ে কানাইপুরও। কারণ প্রথম পর্যায়ে যাঁরা কাউন্সেলিংয়ে ডাক পেয়েছিলেন তাঁদের কেউ কেউ ওই স্কুলে শিক্ষকতা করবেন বলে কমিশনকে জানিয়েও এসেছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে তারা আর স্কুলে যোগদান না করায় এবারও স্কুলে ওই দুই বিষয়ের শিক্ষক পাওয়া যায়নি বলেই জানান স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুকান্ত দাস।

তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাউন্সেলিংয়ের আগেই স্কুলের পক্ষ থেকে কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিতে যাওয়া ভাবী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠান হয়েছে। স্কুলের নাম লেখা একটি কাগজে হাতে লিখে স্কুলের দুই বিষয়ের উল্লেখ করে সেখানে শূন্য পদের সংখ্যা জানানো হয়েছে। সেখানে ক্যাটাগোরি, রোস্টার পয়েন্ট ও বাংলা মাধ্যমের কথাও জানানো হয়েছে। বীরভূমের কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুল, মুরারই রেল স্টেশন থেকে ১৪ কিলোমিটার, বাঁশলৈ স্টেশন থেকে ৮ কিলোমিটার ও রাজগ্রাম স্টেশন থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে।

এই দূরত্বেই কারণে শিক্ষক নিয়োগের প্রথম পর্যায়ের কাউন্সেলিংয়ে স্কুলটিকে বেছে নেওয়ার পরেও কেউ আর কাজে যোগ দেননি। তাই দূরত্ব উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে ফেসবুক বার্তায়। সুকান্ত বলেন, ” অনেকেই আছেন যাঁরা প্রাথমিকে আগে থেকেই চাকরি করেন আবার উচ্চ প্রাথমিকে কাউন্সিলিংয়ে ডাক পেয়েছেন। পরে হিসেব করে দেখছেন হয়ত বেতন কম হচ্ছে, কিংবা তাঁদেরই কেউ ভাবছেন বাড়ির কাছের স্কুল ছেড়ে অতদূরে গিয়ে কী লাভ। এই সব ভেবেই হয়ত শেষ পর্যন্ত কাজে যোগ দিচ্ছেন না তাঁরা।” দ্বিতীয় পর্যায়ে যাতে এই বিষয়টি সম্পর্কে হবু শিক্ষকরা অবগত থাকেন তাই সমাজমাধ্যমে এইরকম বার্তা স্কুলের পক্ষ থেকে পোস্ট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কানাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ওই ফেসবুক বার্তায় পরিস্কার করে লিখে দেওয়া হয়েছে, “দয়া করে কাউন্সেলিংয়ে গিয়ে পছন্দ হলে তবেই স্কুল নিন। চাকরিটা না করলে অযথা কেউ ব্লক করে দেবেন না। দীর্ঘ বারো বছর থেকে বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ের শিক্ষক নেই। কারণ নিয়োগ হয়নি। যাদের চাকরির দরকার তাদের সুযোগ করে দিন। তাহলে সবাই উপকৃত হবে।” সেই বার্তা পোস্ট করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে। কেউ সেই বার্তা পড়ে এগিয়ে আসবে না পিছিয়ে যাবে সে ব্যাপারে না জানলেও স্কুলের শিক্ষকরা অবশ্য এবার শূন্য পদ পূরণের আশা ছাড়তে নারাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights