
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ এক বছরও গেল না, তৃণমূলের বহরমপুর শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি দিলীপ সিংহরায়কে ছেঁটেই ফেললেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার রাতে সমাজমাধ্যমে একটি তালিকা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান। সেই তালিকা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বহরমপুর সংগঠনের নতুন সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে রানিতলা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপ সিংহরায়কে। বহরমপুরের শিক্ষক নেতা বদলালেও জঙ্গিপুরের শিক্ষা সেলের সভাপতি অবশ্য বদলালনি ব্রাত্য। তৃণমূলের জঙ্গিপুর সংগঠনের শিক্ষা সেলের দায়িত্বে থাকলেন লস্করপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আসরাফ আলি রাজবীই।
ব্রাত্য বসুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় জেলায় শিক্ষক সংগঠনে একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ উঠেছিল দিলীপ সিংহরায়ের বিরুদ্ধে। এমনকি জেলার এক পরিচিত শিক্ষকের দাবি, ” মতে না মিললে ব্রাত্য বসুকে বলে শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলেও হুমকি দিতেন দিলীপ।” এক শিক্ষক নেতার দাবি, ” প্রাক্তন এবিটিএ সদস্য সুদীপ সিংহরায়কে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নজিরবিহীন আক্রমণ করেন দিলীপ সিংহরায়।” ওই শিক্ষক নেতা ও তাঁর সহকর্মীদের একাংশের তীব্র আপত্তির কথা তৃণমূলের মূল সংগঠনের সভাপতিকেও একাধিকবার জানিয়েছেন বলে এদিন দাবি করেছেন ওই শিক্ষক।
ব্রাত্য সমাজমাধ্যমে লিখেছেন ” তৃণমূল কংগ্রেসের ৩৫-টি সাংগঠনিক জেলা-সভাপতিদের (AITC) সুপারিশক্রমে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অ্যাডহোক কোর কমিটির অনুমোদনক্রমে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ এবং তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ৩৫-টি জেলার সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হলো।” সংগঠনে দিলীপের সুনাম না থাকলেও জঙ্গিপুরে অবশ্য আসরাফকে নিয়ে অভিযোগ নেই।
তৃণমূলের অন্য শাখা সংগঠন নির্বাচন সহ দলীয় নীতি প্রণয়ন সহ একাধিক কর্মসূচিতে সমাজে ছাপ ফেললেও কিছুতেই বহরমপুরের শিক্ষক সংগঠন ছাপ ফেলতে পারছিল না বলে দাবি একাংশ শিক্ষকের। মূল সংগঠনের ধাঁচে মুর্শিদাবাদে শিক্ষক সংগঠনকেও দুভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। অবিভক্ত মুর্শিদাবাদের সভাপতি হিসেবে শেখ মহম্মদ ফুরকান সংগঠনকে ধরে রাখলেও সেই ভার হালকা হয়ে যায় দিলীপ দায়িত্ব পাওয়ার পর, দাবি ওই শিক্ষকদের।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে লোকসভা নির্বাচনের মুখে শিক্ষকদের জোটবদ্ধ করতে শিক্ষা সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্রাত্য বসু ঘনিষ্ঠ বলে জেলায় পরিচিত শিক্ষক মুখ দিলীপকে। যদিও তাঁর নাম ঘোষণা হওয়া ইস্তক তাঁকে মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল শিক্ষা সেলের একটা বড় অংশের শিক্ষক। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের মূল সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি শাওনি সিংহরায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন দিলীপ। বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করেছেন। নাগারে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দলের একাংশ শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। যা একসময় অস্বস্তিতে ফেলেছিল জেলা নেতাদের।
দায়িত্ব পেয়ে নয়া শিক্ষক নেতা সুদীপ এদিন বলেন, ” মা মাটি মানুষের আদর্শ নিয়ে থাকতে চাই। পুরনো নতুন সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।” তিনি আরও বলেন, ” শেখ মহম্মদ ফুরকানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে এসেছিলাম। আমি চেষ্টা করব যারা অবহেলিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলতে। আমাদের কোনও গোষ্ঠী নেই।” ব্রাত্যর ওই পোস্ট থেকে জানা যায়, বহরমপুরে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনে কোনও পরিবর্তন না হলেও কলেজ ও প্যরাটিচার সংগঠনে নতুন মুখ আনা হয়েছে দায়িত্বে।
তবে জেলায় এর আগে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত শিক্ষক সংগঠনে কোনও পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি নেই। এদিন ব্রাত্য অবশ্য জানিয়েছেন “খুব শীঘ্রই পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি ঘোষিত হবে।”