সংবাদ প্রতিনিধি, কলকাতাঃ গলার কাঁটার মতো তৃণমূলের গলায় বিঁধছেন সুখেন্দু শেখর রায়। আরজিকর কান্ডে নিহত তরুণী চিকিৎসক কান্ডে এমনিতেই উত্তাল দেশ। বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। আর প্রতিবাদের সুরে সুর মিলিয়ে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন সুখেন্দু। কখনও মেয়দের রাত দখলের কর্মসূচির পক্ষে নিজের অকপট সমর্থন। কখনও রবীন্দ্র রচিত আমি ভয় করব না ভয় করব না লিখে ইঙ্গীত পূর্ণ পোস্ট কখনও নতুন আইনের প্রয়োগ চেয়ে সমাজ মাধ্যমে একাধিক পোস্ট করেন।
আর এই অবস্থায় সুখেন্দুর পাশে থাকার বার্তা দিতে সোমবার দুপুরে দলের প্রাক্তন নেতাকে রাখি পড়িয়ে আসেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর দলবল। আশুতোষ জানিয়েছেন রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। সুখেন্দুর দাবিতে তাঁরা সুর মিলিয়েছেন। সেই বার্তা দিতেই তার হাতে রাখি পড়ানো হয়েছে বলে দাবি তাঁর। তাঁর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অধীর চৌধুরীরা এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁরাও চাইছেন স্বচ্ছ তদন্ত হোক বলে এদিন সংবাদ মাধ্যমে দাবি করেছেন আশুতোষ।
কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি চেয়ে সেই সমাজমাধ্যমেই সরব হয়েছিলেন সুখেন্দু। ঘটনার অনেক পরে পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশিতে যায় আরজিকরে। সুখেন্দু তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই দাবিও করেছিলেন। যা ভাল চোখে নেয়নি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।ভুল তথ্য পরিবেশনের জন্য লালবাজার থেকে তাঁর ডাক পরে। সূত্রের দাবি, দু-বার ডাকা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এই আইনজীবি নেতা। দলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুনাল ঘোষ প্রকাশ্যে সুখেন্দুর বিরোধিতা করলেও অনেকেই দলের অন্দরে সুখেন্দুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও সুখেন্দু ও কুনালের বক্তব্য তাঁদের ব্যক্তিগত বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের আর এক নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তবে প্রবীণ সাংসদকে সমর্থন করেছেন তৃণমূলের আর এক প্রবীণ সাংসদ জহর সরকারও।
প্রসঙ্গত, সুখেন্দুর নগরপাল ও প্রাক্তন অধ্যক্ষের গ্রেফতারের দাবিকে সামনে রেখে আগামীকাল লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছে মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস। রাজ্যে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রাজনীতির সব রঙ মিশে গিয়েছে পথে-মাঠে। সেই সঙ্গে ঘোলা জলে মাছ ধরতেও নেমেছেন অনেকে। এমনটাই দাবি তৃণমূলের। তবে শুধু কংগ্রেস নয় রবিবার সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিমও সুখেন্দুর দাবির পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে রাজ্য বিজেপিও।

দিল্লির রাজনীতিতে চেনা মুখ সুখেন্দু রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের উপনেতা। তাঁর হাতেই ভার রয়েছে দলের মুখপাত্র জাগোবাংলার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেল হওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে সুখেন্দুর জাগো বাংলার সম্পাদক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজিকর কান্ডে প্রশাসন ও সরকারর প্রতি ক্ষুব্ধ অভিষেকও দলে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন বলে দাবি সূত্রের।