মৌমিতা চক্রবর্তী, কলকাতাঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন মল্লিকার্জুন খড়গে। একইসঙ্গে বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের কাছ থেকে শনিবার নিজের দূরত্বও বাড়ালেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি।
মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে সাংবাদিক সম্মেলনে খড়গে বলেন, “ইউপিএ সরকারকে বামেরা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা করতে পারেন। উনি জোটের পক্ষে আছেন তা স্পষ্ট করেছেন।” কিন্তু অধীর চৌধুরী বাংলায় তৃণমূলের বিরোধীতা করছেন। সংবাদ মাধ্যমের এই প্রশ্নে খড়গে বলেন,”হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নেবে। অধীর চৌধুরী নন। যিনি সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারবেন তিনি থাকবেন। যিনি পারবেন না তিনি থাকবেন না।” তাঁর এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখ তৃতীয় দফা নির্বাচনের আগে মালদহের সুজাপুরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন খড়গে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “তৃণমূলকে ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। তৃণমূল কখনও কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে পারে কংগ্রেস।” সেই খড়গের শনিবারের মন্তব্যে ‘দ্বি-চারিতা’ দেখছেন বাংলার নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীরা।
করিমপুর এক নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সম্পাদক অভিজিৎ অধিকারী। তিনি বলেন, ” আমাদের দুর্ভাগ্য। কেন্দ্রের নেতারা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ভুল বোঝান। সে জয়রাম রমেশই হোক আর মল্লিকার্জুন খড়গেই হোক। এরা বাংলার প্রকৃত রাজনৈতিক চিত্র তাঁদের কাছে তুলে ধরেন না। কংগ্রেসের যদি কেউ সবথেকে বেশি ক্ষতি করে থাকে তাহলে তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দলটির নাম তৃণমূল। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসকে শেষ করেছে মমতা। সুবিধামতো কখনও বিজেপি কখনও কংগ্রেসকে ব্যবহার করেছে।”
বাংলায় কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতির বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, রাজ্য থেকে বাংলাকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত করছে তৃণমূল। তা রুখতেই মরিয়া হয়ে লড়াই চালাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর। অন্যদিকে বিজেপির মতো একটি ধর্মভিত্তিক দলের হাত থেকেও বাংলাকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর কংগ্রেস।
একদিকে কংগ্রেসকে বাঁচানো অন্যদিকে বাংলাকে বাঁচানো এই দুই লক্ষে চলতি লোকসভা নির্বাচনে তাই অধীরকে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে। যা ইতিমধ্যে রাজ্য জুড়ে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। রাজ্যের লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসন পেতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। আর সেই সম্ভাব্য ফলাফলে উজ্জীবিত বাংলার বাম-কংগ্রেস উভয় দলের নিচু তলার কর্মীরা।
কেন্দ্রের বিজেপি তথা এনডিএ জোটের বিরুদ্ধ জোট হিসেবে তৈরি হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। সেই জোটে তৃণমূল আছে। যদিও নির্বাচন শুরুর সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকবেন কী থাকবেন না তা পরে ঠিক করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু চার দফা নির্বাচন শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, তিনি ইন্ডিয়া জোটে আছেন। সর্বভারতীয় স্তরে আছেন। তার আগে অবশ্য ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়লে তাঁকে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন।
পুরুলিয়ার বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাত বলেন, “প্রচারে থাকায় খড়গে কী বলেছেন তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তবে খড়গে যা বলতে চাইছেন তা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে হতে পারে। আবার আমাদের প্রদেশ সভাপতির দাবিও বাংলার ক্ষেত্রে ঠিক। আমরা বাংলায় তৃণমূলের বিরোধী।”
প্রদেশ কংগ্রেসের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “উনি (মল্লিকার্জুন খাড়গে) হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত বলতে যা বলছেন সেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অন্যতম সদস্য অধীর চৌধুরীও। এবং তিনি লোকসভার বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতাও। কিছুদিন আগে এই মল্লিকার্জুন খাড়গে মালদহতে এসে বলেছিলেন বিজেপি যেভাবে কংগ্রেসকে দূর্বল করছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলও সেইভাবে কংগ্রেসকে ভাঙার চেষ্টা করছে। অতএব তৃণমূল কংগ্রেসকে একটিও ভোট নয়। এই দু-ধরনের কথার আমার কাছে কোনও মান্যতা নেই।”
আরও পড়ুনঃঅবাধ নির্বাচনের দাবি সেলিম, সুজনের