বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ “কারা যেন আজ দুহাতে খুলেছে, ভেঙেছে খিল / মিছিলে আমরা নিমগ্ন তাই, দোলে মিছিল।” মনোনয়ন জমা দেওয়ার বর্ণাঢ্য মিছিল শেষ কবে লালে লাল হয়েছিল বহরমপুরে মনে করতে পারেন না শহরের প্রবীণ নাগরিকরা। গনগনে সূর্যের তাপ মাথার উপরে তবু নতুন প্রজন্ম মগ্ন থাকল মহম্মদ সেলিমের মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার রাস্তা জুড়ে। বহরমপুর লাগোয়া লালবাগ শহর থেকে এসেছিলেন পরিমল বিশ্বাস। বয়স ৩২। বললেন, “আমি কোনওদিন সিপিএম করিনি, কংগ্রেস করিনি এমনকি হাল আমলের তৃণমূল কংগ্রেস তাও করি না। কিন্তু সেলিমের মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার মিছিলে কেন এলাম এ প্রশ্ন করবেন না। উত্তর দিতে পারব না।” কার্যত আবেগে ভাসছিলেন মুদিখানার দোকানদার পরিমল।

“হক রুটি রুজি/ জনতাই পুঁজি”- এই পাঁচ শব্দ বন্ধনীতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে নেমেছে সিপিএম। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, শতরূপ ঘোষরা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার বহু আগে থেকে বেকারত্ব, দুর্নীতি সহ একাধিক দাবিতে শান দিয়ে কার্যত মুর্শিদাবাদের জোট প্রার্থী সেলিমের ভোট প্রচারের রাস্তা তৈরি করেছিলেন। সেই রাস্তায় হেঁটেই সেলিম চাইছেন সংসদে মুর্শিদাবাদের মানুষের কথা তুলে ধরতে। জনমত মিলবে ৭ মে। ফল বেরোবে ৪ জুন। তবে আবেগের হাওয়া উড়িয়ে প্রাথমিক জয়ী হলেন সেলিমই, বলছেন জনতাই।
আরও পড়ুনঃ দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়া মুর্শিদাবাদের ভোট বাজার

বৃহস্পতিবার সেলিমের মনোনয়ন জমা দেওয়ার মিছিলে মিশেছিল কংগ্রেসের পতাকাও। তারাও এদিন চাইলেন সেলিমের হয়ে ভোট। অধীর চৌধুরীও এলেন শেষ বেলায়। গলায় সিপিএমের উত্তরীয় পড়ে ছবিও তুললেন নিঃসংকোচে। মিছিলের এক কংগ্রেস কর্মী বললেন, “সিপিএমের সঙ্গে নিজেদের পতাকা মেশাতে ইতস্তত করছিল। কিন্তু যখন জোশ চলে এল দেখলাম ওরা বলছে বন্দেমাতরম, আমাদের ছেলেরা বলছে ইনকিলাব জিন্দাবাদ।”
তবে তাল কাটল শেষ বেলায়। কংগ্রেসের সঙ্গে না হাঁটার পরিকল্পনায় নিজেদের দূরেই রেখেছিলেন বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতারা। সেইমতো কালেক্টরেট ক্লাবের মুখে জনা পাঁচ সাতজন কর্মী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিভাস চক্রবর্তীরা। সেলিমের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সেখান থেকে বিদায় নেন তাঁরা। পরে বিভাস বলেন, ” আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে এই জোট মানি না। সিপিএম বামফ্রন্টের শরিক। সেই হিসেবে মহম্মদ সেলিমের নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমাদের কর্তব্য। তাই তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মিছিলে হাঁটি নি।”
ফিচার ছবিঃ মহঃসেলিমের ফেসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত