‘দিদি’র ডাক, পিছোল জেলা পরিষদের সাধারণ সভা

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ দলীয় বৈঠকের জেরে মুর্শিদাবাদে পিছিয়ে গেল জেলা পরিষদের সাধারণ সভা। চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ, বিধায়ক সহ সর্বস্তরের নেতা নেত্রীদের বৈঠক ডেকেছেন কলকাতায়। ওই বৈঠকে হাজির থাকার ডাক পেয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ শাসক দলের কর্মাধ্যক্ষরা। সেদিনই বার্ষিক সাধারণসভা ডেকেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা। কিন্তু “বিশেষ কারণবশত” ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখের বদলে মার্চ মাসের পাঁচ তারিখ ওই বৈঠকের পরবর্তী দিন ঘোষণা হয়েছে বলে ফের চিঠি দিয়ে সকল সদস্যকে জানিয়ে দিয়েছেন সভাধিপতি।

যদিও বিরোধী কংগ্রেস সভার দিন পরিবর্তন নিয়েও শাসকদলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। জেলা পরিষদের সদস্য তৌহিদুর রহমান ওরফে সুমন বলেন, ” জেলা পরিষদ সাধারণ মানুষের। কিন্তু তৃণমূল প্রমাণ করল এই দলের সভাধিপতি, মানুষের নয়। তাতে জেলা পিছিয়ে যায় যাক।” তিনি আরও বলেন, ” এমনিতেই পঞ্চায়েত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এতদিন সাধারণ সভা ডাকা হয়নি। যদিও বা ডাকা হল তাও বাতিল হল। আসলে এই জেলা পরিষদে মৌরুসী পাট্টা চালাচ্ছেন সভাধিপতি।”

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১৩ তারিখ অর্থ, সংস্থা উন্নয়ন ও পরিকল্পনার স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন শাসক দলের কর্মাধ্যক্ষরাই। গত আর্থিক বছরের প্রায় তিনশো কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। সেই টাকা খরচের জন্য রাজ্য থেকেও তাগাদা দেওয়া হয়েছে বারবার। জেলায় এসে সে কথা জানিয়েও গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও। সেই টাকা কীভাবে খরচ করা হবে তা নিয়েই সেদিন বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা পরিষদের সচিব। কিন্তু দলের কর্মাধ্যক্ষদের একাংশ বৈঠক বাতিল করায় সেবার সমালোচিত হয়েছিলেন সভাধিপতি।

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ গঠনের পর কেটে গিয়েছে আড়াই বছর। সংখ্যালঘু ও মহিলা মুখ রাবিয়া সুলতানাকে সভাধিপতি বেছে সেই সময় একপ্রকার তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বোর্ড গঠন হওয়া ইস্তক তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে দল ও বিরোধী সদস্যদের পক্ষ থেকে। বিরোধী সহ শাসক দল তৃণমূলের একাংশ কর্মাধ্যক্ষের অভিযোগ, এই অল্প সময়েই সভাধিপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলাপরিষদের ‘মৌরুসী পাট্টা’ চালাচ্ছেন।

বিরোধী কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্য তৌহিদুর রহমান ওরফে সুমনের অভিযোগ, “সরকারি তেল চুরি থেকে দরপত্র ডাকা সবেতেই দুর্নীতি চলছে জেলা পরিষদে, আর তা হচ্ছে সভাধিপতির ইন্ধনেই।” শাসক দলের এক সদস্য বলেন, “নিয়ম করে দরপত্র ডাকেন না সভাধিপতি। এখন শুনছি সরকারি টাকায় কেনা তেলও নয়ছয় করেন সভাধিপতি।” সুমন বলেন, “আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এর আগে তেলের টাকা ফেরত দিয়েছেন সভাধিপতি। কম্বল কান্ডেও দ্বিতীয় বার দরপত্র ডাকতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা ফের তেল কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত করবো।”

জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বর্তমান পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সামসুজ্জোহা বিশ্বাস বলেন, ” যাঁরাই এই অভিযোগ তুলছেন তাঁরা সভাধিপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়ম বেনিয়ম হলে তা যাচাই করার অধিকার রয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। আসলে কংগ্রেস দীর্ঘদিন ক্ষমতায় নেই। তাদের জেলাবাসীর উন্নয়ন নিয়ে কোনও দায় নেই। তাই এইসব অভিযোগ করা ছাড়া রাস্তাও নেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights