
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ জন্মের ছ’বছরের মধ্যেই পড়ুয়াদের মনে স্থান পেয়েছে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতকোত্তরে একাধিক বিষয়ে পড়ুয়া ভর্তির নিরিখে পড়শি নদিয়া ও মালদহের দুই নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় কল্যাণী ও গৌরবঙ্গকে টপকে এগিয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তকমা পেলেও এখনও তা অপরিপূর্ণ। সেই কারণে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন ছিল জেলাবাসীর। এই অবস্থায় সম্প্রতি ঘোষিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্যের নাম। বছর চারেকের জন্য এই দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী পরমাণু বিজ্ঞানী জানে আলম।
বছর খানেক আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে এসেছিলেন গবেষক অধ্যাপক অচিন্ত্য সাহা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন সুজাতা বাগচী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইস্তক এই বিশ্ববিদ্যালয় আজও পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়নি। জেলার ২৬টি কলেজে এখনও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। অথচ কথা ছিল, জেলার কলেজগুলি মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নিয়ে আসার। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনও স্থায়ী রেজিস্টার, পরীক্ষা নিয়ামক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস ও। তাই নতুন উপাচার্যের কাঁধে পঠন পাঠন থেকে পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে পড়ুয়াদের আস্থার ঠিকানা গড়ে তোলবার মতো গুরুভার দায়িত্ব।
যদিও জেলার শিক্ষককূলের একাংশের বক্তব্য, লাল ফিতের ফাঁস ছিঁড়ে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন কাজ উপাচার্যদের। পড়ুয়াদের মার্কশিটে সাক্ষর দেওয়াটুকু ছাড়া অন্য কাজ করা হয়ত সম্ভব হবে না বলে মনে করেন কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তনী সংগঠনের সম্পাদক দেবজ্যোতী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ” শুধু আমাদের মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নয়, বাংলার বর্তমান সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের স্বাধীনভাবে কর্মসূচি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।”
জেলায় অবস্থিত আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসের আধুনিকিকরণ সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনার জন্য দিন সাতেক আগে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের পাঁচ সাংসদ। জঙ্গিপুরের খলিলুর রহমান, মুর্শিদাবাদের আবু তাহের খান, বোলপুরের অসিত কুমার মাল, আরামবাগের মিতালি বাগ ও সামিরুল ইসলাম। বৈঠক শেষে তাঁরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ একাধিক দাবি তুলে উপাচার্যকে চিঠিও দিয়েছেন। স্নাতোকোত্তরের পাশাপাশি সেখানে স্নাতকস্তরে বিএসসি-র মতো আরও তিনটি কোর্স পড়ানোর দাবিও তুলেছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই জেলার দুই প্রান্তে দুই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের নড়াচাড়া ঠান্ডা হাওয়ায় বাড়তি উষ্ণতা ছড়িয়েছে তো বটেই।
যদিও কৃষ্ণনাথ কলেজের থাকা না থাকা নিয়ে কুয়াশা কাটেনি এখনও। ২০১৮ সালে আইন করে ১৭২ বছরের ঐতিহ্যের কৃষ্ণনাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই আইন অনুযায়ী কৃষ্ণনাথ কলেজের নাম মুছে গিয়েছে রাজ্য তথা দেশ থেকে। যদিও বাস্তবে ওই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখনও কলেজে পড়ুয়া ভর্তি হচ্ছে গত ছ’বছর ধরে। অধ্যক্ষের পদও সামলাচ্ছেন সুজাতা বাগচী বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের ক্লাস নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি অস্থায়ী শিক্ষকরা। কিন্তু কীভাবে টিকে আছে কৃষ্ণনাথ কলেজ ?
যার দানে গড়ে উঠেছিল এই কলেজ জেলাবাসীর একাংশ চেয়েছিলেন কলেজ অবলুপ্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে সেই রাজা কৃষ্ণনাথের নাম জুড়ে দিতে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা করে আর্জি জানিয়েছিলেন প্রাক্তনীরা। তিনিও কোনও রাস্তা দেখাতে পারেননি বলেই দাবি দেবজ্যোতির। আবার কৃষ্ণনাথ কলেজের পঠনপাঠনেও ছেদ টানেনি সরকার। একাংশ জেলাবাসীর আশা কৃষ্ণনাথ কলেজকে ফের হয়ত আইন করেই ফিরিয়ে আনতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মুছে দিয়েও তাকে ভাসিয়ে রাখতেই সরকার কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ুয়া ভর্তির ক্ষেত্রে ছেদ টানেনি। তাই কী? সরকারিস্তরে অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলছে না কেউ।