বিদ্যুৎ মৈত্র, মুর্শিদাবাদঃ ‘শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে সেকথা জানো না?’ শঙ্খ ঘোষের লিখে যাওয়া এই কবিতার লাইনই কি বুধবার সমালোচকদের ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিমরা।
জলঙ্গীতে শ্রমিক দিবসের দিন মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনের জোট প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের সমর্থনে বাগমারা বিদ্যালয় ময়দানে জনসভার ডাক দিয়েছিল বামেরা। সেই সভায় বক্তব্য রাখতে হাজির ছিলেন বাম যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হাজির ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি শীলাদিত্য হালদার। ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। আর প্রার্থী স্বয়ং সেলিম। এছাড়াও দুই দলের স্থানীয় নেতা কর্মী ও সহযোগি দলের সদস্যরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঊষসী চক্রবর্তী।.
আমরা একটা টুকরো রুটিতে বেঁচে থাকতে চাই না আমরা একটা গোটা রুটির দাবি করেছি। আর সেই রুটি নিজেরা রোজগার করতে চাইছি। তার জায়গা চাইছি।”
সেই সভাতেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে মীনাক্ষী, শীলাদিত্যরা দেখেন সামনে যেন জনস্রোত। মীনাক্ষী বলেন, ” আমরা একটা টুকরো রুটিতে বেঁচে থাকতে চাই না আমরা একটা গোটা রুটির দাবি করেছি। আর সেই রুটি নিজেরা রোজগার করতে চাইছি। তার জায়গা চাইছি।” আর ছাত্র যুবরা গরু পাচার, লোহা পাচার করতে চাইছে না তিনি বলেন তাঁরা চাইছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে।” সেলিম বক্তব্যে উসকে দিয়েছেন “রাজ্যে ৭৫ হাজার পুলিশের পদ ফাঁকা আছে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে হবে। যে পুলিশ আছে তাদের দিয়ে ভোট লুট করা হয়েছে।” তিনি উপস্থিত জনতাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ” কোনও ভোট এবার লুট হতে দেব না। মানুষ দশ বারো বছর পর নিজের ভোট নিজে দেবেন।” শীলাদিত্য বলেন, “আমরা তিনটি আসনেই জয়লাভ করব।”
উপস্থিত মানুষজন নেতাদের কথা শুনেছেন শেষ অবধি কেন? জলঙ্গীর বাসিন্দা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শাহনাজ ইসলাম বলেন “মানুষ চাকরি চোর, গরু চোর,কয়লা চোরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল বলে যে একটা দল জলঙ্গীতে আছে আজ তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ বাম-কংগ্রেসকে বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে তাই ঘরের দুয়োর লাগিয়ে আমাদের কমরেডদের কথা শুনতে এসেছে আমাদের ভরসা দিতে এসেছে।”
আরও পড়ুনঃ অধীর চৌধুরীরও সমালোচনা, পদ খোয়ালেন কুনাল
স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা গেল এলাকার বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক দলকে কথা দিয়েছেন ৫০ হাজার ভোটে লিড দেবে জলঙ্গী। ৪০ হাজারের একটি ভোটও কম পাবে না বিজেপি। সে প্রসঙ্গে অবশ্য গেলেন না তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি মইনুল হাসান। তিনি বললেন, “এইজন্যই পশ্চিমবঙ্গ। এখানে গণতন্ত্র আছে বলেই নানান দলের রাজনীতি আছে। সেখানে তাঁদের সমর্থকরা যাবেন এ আর নতুন কথা কী? কিন্তু ভোট কাকে দেবেন সেটাই আসল কথা।”
ডোমকলের পর ভগবানগোলা। ভগবানগোলার পর জলঙ্গী। একের পর এক পুরনো বাম ঘাঁটিতে ঢল নামছে মানুষজনের। ওই তিন বিধানসভা এখন তৃণমূলের কব্জায়। শেষ লোকসভাতেও তৃণমূলের পক্ষে ছিল জনমত। সেখানেই নিজদের মধ্যে রেষারেষিতে ছিন্নভিন্ন তৃণমূলের জলঙ্গী, দাবি এলাকাবাসীর।
তাই কী তবে বাঁক বদল? বাম-কংগ্রেস নেতাদের কথায় আচ্ছন্ন মানুষজন বলছেন ” …দীর্ঘ চরাচর তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই।/ কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম।/ সকলেই চেয়েছে আশ্রয়।…শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে। সেকথা জানো না?”