
সংবাদহাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরে আসার মুহুর্তেই বহরমপুরে বড় খবর। খোদ বহরমপুরে চলল গুলি। আহত বেশ কয়েকজন। উভয়েই তৃণমূলের সদস্য বলে পরিচিত। রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুল বোনা ক্লাবে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুটি গোষ্ঠীর এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে হিংসার ঘটনা ঘটে। দু-পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত এগারোটা নাগাদ বাবুল বোনা ক্লাবের সামনে বচসা থেকে মারামারি শুরু হয়। ভয় দেখাতে দুষ্কৃতীরা শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলেও দাবি। বেধড়ক মারধর করা হয় বাবুল বোনা ক্লাবের সম্পাদক মিঠু জৈন সহ আরও চারজন ক্লাব সদস্যকে। মিঠু তৃণমূলের বহরমপুরের প্রাক্তন যুব সভাপতি। তাছাড়াও একসময় মূল দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদেও ছিলেন মিঠু। যদিও তিনি দীর্ঘদিন তৃণমূলে সক্রিয় নেই। কিন্তু তিনি ওই ক্লাবের দীর্ঘদিনের মূল কার্যকর্তা হিসেবেই পরিচিত। খেলাধুলোর থেকেও জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর আয়োজক হিসেবে জেলায় পরিচিত বাবুল বোনা ক্লাব।
তবে মিঠুর অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের বর্তমান বহরমপুর যুব সভাপতি পাপাই ঘোষের দিকে। পুলিশ বহরমপুর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি সুমন চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠ আয়ূশ সাহাকে গ্রেফতার করেছে। যারা পাপাই ঘনিষ্ঠ বলেই দাবি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। সুমন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি করে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

কী নিয়ে অশান্তি?
সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে মিঠুর দাবি, ” রাত এগারোটা পনেরো নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ধৃত সুমন চৌধুরী, আয়ূশ সাহা, মেঘনাদ সাহারা আক্রমণ করে আমাদেরকে অতর্কিতে। এরা সবাই পাপাইয়ের ছায়া সঙ্গী।” তাঁকে পেডাস্টেল ফ্যান দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মিঠুর অভিযোগ। তিনি বলেন, ” ভেঙে ফেলা হয় চেয়ার টেবিল সহ ক্লাবের আসবাব পত্র। পিস্তলের বাট দিয়েও মারধর করা হয়।” ঘটনায় আহতরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কেন মিঠুকে আক্রমণ করা হল ?
এই পাপাইকে আমি তৃণমূলে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কেন আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনওদিন রেষারেষি ছিল না। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে বহরমপুর অপরাধীদের খোলা জায়গা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একটি বাচ্চা ছেলের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে আসছে আমার কাছেই সেটাই বড় প্রশ্ন।
মিঠু জৈন এককালে তৃণমূলের আর এক নেতা অরিত মজুমদার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ঘাসফুলের অন্দরে। যদিও এব্যাপারে বিশদে জানতে অরিতকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, ফোন ধরেননি বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। পাপাই অবশ্য সংবাদমাধ্যমে মিঠুকে সমাজবিরোধী আখ্যা দিয়ে বলেন, “ আমাদের ছেলেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনকে বোঝাচ্ছিল। সেই সময় মিঠুর লেঠেল নিয়ে এসে আমাদের ছেলেদেরকে মারধর করেছে রাতের বেলা ওই ক্লাবে ঢুকে। এলাকার মানুষ তার প্রতিবাদ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে।“
পর্যবেক্ষকদের দাবি, ক্লাব দখলকে কেন্দ্র করেই বহরমপুরে এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলায় পৌঁছানোর মাত্র কয়েকঘন্টা আগে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “ শমসেরগঞ্জের মানুষকে নিরাপত্তা দেবেন বলে জেলায় মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। হাজার হাজার পুলিশে ছেয়ে ফেলেছে জেলা। কয়েকদিন ধরে রাজ্য পুলিশের বড় বড় কর্তারা জেলা জুড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা করেছে। সেখানে খোদ বহরমপুরে চলল গুলি। এরথেকে প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি রাজ্যবাসীকে নিরাপত্তা দেবেন কী করে। পুলিশের ব্যর্থতায় তাঁর নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।” তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “ আমি শুনলাম ঘটনাটি। আরও খবর নেব। পুলিশের ওপর আস্থা রাখুন, তদন্ত করে ঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“