
সুব্রত দাসঃ ঝড় থেমে গিয়েছে। কিন্তু ধুলিয়ানের ক্ষতে প্রলেপ লাগেনি এখনও। যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সেখানে ঘটেছে তা এর আগে কখনও ঘটেনি। যা অবাক করেছে এলাকার প্রবীণ মানুষদের। ঘরছাড়া ধুলিয়ান শহর ও তার পাশের তিন পাকুড়িয়া পঞ্চায়েতের বহু মানুষ। তাঁদেরকে ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
ঘর ছাড়াদের সঙ্গে কথা বলতে আজ মালদহের পারলালপুর হাইস্কুলে এসেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা। এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও। তবে কমিশনের সদস্যরা হিংসা কবলিত সুতি, শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানে গেলেও রাজ্যপাল মালদহের ত্রাণ শিবিরের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেই ফিরে যাবেন।
রাজ্যপালের আসা প্রসঙ্গে ফের রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে আঁতাতের প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “রাজ্যপালকে উনি আটকাতে পারেন না। আমাদের পারেন।” তিনি মনে করেন, “ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অকারণে শমসেরগঞ্জকে ইস্যূ বানিয়ে রেখে দিতে চাইছেন। দাঙ্গার প্রচারে বাংলার ভাবমূর্তির বিসর্জন হচ্ছে। বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে। আর এরজন্য দুই দলই অপেক্ষমান। তিনি আরও বলেন “ ২০২৬ এর আগে হিন্দু মুসলমানের এই রাজনীতি থামবে না।”
রাজ্যে কমিশনের সদস্যদের আসা প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, ” এরা অন্য কোনও রাজ্যে যান না। মণিপুর জ্বলছে। সেখানে যান না। যেখানে খুন, ধর্ষণ হয়,মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পোড়ে, জাতি বিদ্বেষ ছড়ায়, সম্পত্তি নষ্ট, আগুন, প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে সেখানে যায় না। বাংলার জন্য সরকার এদের টিকিট বরাদ্দ করে। বিজেপির নির্দেশে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আসে। এরা দলদাস।” তিনি আরও বলেন, ” সীমান্তরক্ষার দায়িত্ব অমিত শাহের। তাহলে কী করে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতিরা এসে এই কাণ্ড ঘটাল? আমরা এর তদন্ত চাইছি।”
ধুলিয়ান পুরসভা ও তার পাশের তিনি পাকুড়িয়া পঞ্চায়েতের রানিপুর, বেদবোনা, জাফরাবাদে সকাল সন্ধ্যে ভারী বুটের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এখনও। গুজব ঠেকাতে ইন্টারনেটে রাশ টেনেছে প্রশাসন। তবু গুজব থামেনি। এলাকায় এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনা। দিন দুয়েক আগে তারমধ্যেই বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পরিস্থিতি ফেরাতে এলাকায় এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা ঘুরছেন। মানুষজনকে সাহস দিচ্ছেন। তবু অসাড় এই জনপদ। এমন সময় পরিস্থিতি বদলাতে শাসক দলের নেতারা পথে নামলেন শুক্রবার বিকেলে।
সেই দলে ছিলেন সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস, ছিলেন শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, ও তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ বীরভূমের সামিরুল ইসলাম ও এলাকার হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন। এলাকায় ঘুরে ধুলিয়ান মিলন মন্দিরের সামনে সম্প্রীতি বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ঘোষণা করলেন এলাকায় তৈরি হবে শান্তিরক্ষা কমিটি। এলাকায় শান্তি ফেরাতেই হবে বলে বার্তা দেন শাসক দলের দুই সাংসদই। তবে কংগ্রেস নেতা অধীর মনে করেন, “ প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলেই এই ঘটনা থামবে। প্রশাসন ক্রীতদাসত্ব বন্ধ করলে এসব কিছু ঘটবে না। না দিদিকে লাগবে, না দাদাকে লাগবে। এখানে যে ঘটনা ঘটেছে তা যাতে আর না ঘটে তারজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। শান্তি ফেরাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”