
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ হিংসা কবলিত এলাকায় দিনভর কাটিয়ে রাতে কলকাতা ফিরতে ফিরতে সারাদিনের অভিজ্ঞতাটাই বারবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিচ্ছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের চিকিৎসকরা।
ওয়াকফ আইন বাতিলের প্রতিবাদ করতে নেমে হিংসায় উন্মত্ত হয়ে ওঠেন শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, সুতি এলাকার একাংশ মানুষজন। টানা কয়েকদিন তাণ্ডব চালানোর পর সেখানকার পরিস্থিতি এখন থমথমে। নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে কেউ পড়শি জেলায়, কেউ পড়শি রাজ্যে আশ্রয় খুঁজেছে। কেউ কেউ আত্মগোপন করে আছেন ভয়ে। সেই খবর পেয়েছিলেন আরজি করের প্রতিবাদী চিকিৎসকরা। শুক্রবার সেখানেই অভয়া ক্লিনিক খুলে হিংসা কবলিত মানুষদের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন অনিকেত মাহাত, দেবাশিস হালদাররা।
কেমন দেখলেন তাঁদের ? অনিকেত বললেন ” এখনও ওরা অসম্ভব ট্রমাটাইজড।” পাশাপাশি নির্দ্বিধায় এটাও বলছেন ” ক্ষতিগ্রস্থরা যে কথা আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছেন তা থেকে এটা পরিস্কার যে প্রশাসনের দিক থেকে চূড়ান্ত গাফিলতি ছিল। সেই গাফিলতি না থাকলে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটত না।”
যে বেতবোনা, জাফরাবাদ হিংসার ঘটনার পর উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে, যেখানে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে, দেদার লুটপাট চালিয়ে, ভাঙচুর চালিয়ে এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা, সেই দুই জায়গাতেই শিবির খুলেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। চারশো সাড়ে চারশো মানুষগুলোর জ্বর-জ্বালাই তো নয়, তাদের কারও হৃদরোগ আছে, কারও রক্তের চাপ ওঠা-নামা করে, কারও কিডনির সমস্যা, প্রসূতি মায়েরাও আছেন শরণার্থী শিবিরে। সবার বুকে গভীর ক্ষত, মনে চাপা আতঙ্ক। শুধু শারীরিক চিকিৎসা করে পথ্য দিয়ে ছেড়ে দেওয়াই নয়, তাঁরা ক্ষতবিক্ষত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন, পথ্য দেওয়ার থেকেও মানুষজনের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন। পর্যবেক্ষণ করেছেন রোগীর মনের ক্ষত কতটা গভীরে?
সামাজিক ক্ষত থেকে মানসিক ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষতের দাওয়াই হিসেবে তাঁদের সামনে অনিকেতরা বলেছেন এ বাংলা রবীন্দ্রনাথের বাংলা, নজরুলের বাংলা, লালনের বাংলা, এ বাংলা সুভাষচন্দ্রের বাংলা। এই বাংলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলা। এই বাংলায় ভেদাভেদ নেই হিন্দু আর মুসলমানে। এই বাংলায় তাঁদের সহাবস্থান স্থান কাল নির্বিশেষে। তাঁরা পাল্টা কী বললেন? অনিকেত বললেন, ” ক্ষত এতটাই গভীরে সারতে কিছুটা সময় তো লাগবে। তবে ধীরে ধীরে অবস্থা বদলালে, প্রশাসন চাইলে আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যাওয়া অসুবিধার নয়।” আবার আসবেন? অনিকেত বললেন, “নিশ্চয় আসব”