
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ কালো ধোঁয়া সরে গিয়ে যা বেড়িয়ে আসছে তা শুধুই অঙ্গার। কারও ঘর পুড়ে গিয়েছে হিংসার আগুনে, দাউ দাউ আগুনে পুড়ে গিয়েছে কারও ঘাম-রক্ত ঝরানো সঞ্চয়। প্রান্তিক জেলা মুর্শিদাবাদের একটুকরো জনপদ শমসেরগঞ্জ। ঝলসেছে অকাল অনলে। জাফরাবাদ, বেতবোনার চারদিকে শুধু পোড়া আর ভাঙার দাগ। জুড়ে নেওয়ার অবস্থাটুকুও রাখেনি দুষ্কৃতিরা।
চিকিৎসক অনিকেত মাহাত বলছেন ” সামাজিক ক্ষত আজ মানবিক ক্ষততে পরিণত হয়েছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন ” এ খেলা বিপজ্জনক।” বিজেপি’র ইংরেজ বাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেছেন ” শাসক বলে যদি কিছু থাকত তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। এটা একটি স্টেট স্পনসর্ড টেররিজম।” কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলছেন, ” এ আগুন লাগালো কে? কার হাতে ছিল দেশলাই কাঠি?”
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া কিশোর রাহাতকরকে কাছে পেয়ে শনিবার মহিলারা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, রাজ্যপালের পা ধরে কেউ বলেছেন ” আপনি এখানে বিএসএফ ক্যাম্প বসানোর ব্যবস্থা করুন। পুলিশ আমাদের বাঁচতে দেবে না। আমাদের বাঁচান।” এরা সকলেই জাতিতে হিন্দু। ঘটনাস্থলে যাঁরা গিয়েছিলেন, যাঁরা নেড়েচেড়ে দেখেছেন পোড়া আসবাবপত্র, পোড়া দরজা, পুড়ে যাওয়া ভিটের মাটি তাঁরা বলছেন ” একপক্ষই হামলা চালিয়েছে। আর এক পক্ষ শুধু মার খেয়েছে, এদের সঙ্গে সংশোধনী ওয়াকফ আইন আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক ছিল না।”
আর তাই শনিবার কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি যখন এই অশান্তিতে নিহত শমসেরগঞ্জের হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন দাসের বাড়ি যান, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নিহত হরগোবিন্দ দাসের জামাই বলেন, “আপনারা ফিরে যান। আমাদের কিছু হয়নি। আপনাদের নেতারা বলছেন মুসলমানদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তো আপনারা সেখানে যান।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে বহরমপুর থেকে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র। তিনিও গিয়েছিলেন নিহত হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে। তাঁকেও নিহতদের পরিবার জানিয়েছেন তাঁরা ন্যায় বিচার চাইছেন। তাঁরা সরকারের আর্থিক সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছেন বলেও বিধায়ককে জানিয়েছেন। ক্ষত এতটাই গভীরে যে তাঁদের কাছে রাজনীতির কারবারিদের আশ্বাসেও ভরসা নেই। সুব্রত বলেছেন, ” এই শোক সহ্য করা দায়। তবু যদি সাহায্য লাগে বলবেন, আমরা ভারতীয় জনতা পার্টির সৈনিকরা আপনাদের পাশে আছি।”
ওই পুড়ে যাওয়া মাটি হাঁতড়ে বেতবোনার বাসিন্দা গণেশ ঘোষ খুঁজেছেন তাঁর জমানো পাঁচ লক্ষ টাকা। ঘাম-রক্ত ঝরানো সেই টাকার ঝুড়ি হাতে নিয়ে দেখেছেন টাকা নেই, ছাই হয়ে গিয়েছে তাঁর সামান্য সঞ্চয়। যা দিয়ে বর্ষার আগে ঘরটা পাকা করবার কথা ভেবেছিলেন। সেই ভাবনা আজ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। মেয়ের বিয়ের জন্য তিল তিল করে জমানো ছায়া সিংহের দেড় লক্ষ টাকাও পুড়ে গিয়েছে হিংসার অনলে। লুট হয়ে গিয়েছে মেয়েকে উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য সামান্য গহনাও। এমন হিংসার ঘটনা দেখেনি মুর্শিদাবাদের কোনও প্রজন্ম। সম্প্রীতির জেলায় বইছে হিংসার হাওয়া। পরিকল্পিত চক্রান্তের স্বীকার অপেক্ষাকৃত দূর্বলেরা। শুভেন্দু তাঁদের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছেন সুব্রতের মাধ্যমে। টাকা ফিরে পেলেও তার স্বাদ যে বদলে গিয়েছে। সুখের ভাতের স্বাদ কী আর ত্রাণের অন্নে মেলে ? তার মন ভেসে গেছে প্রলয়ের জলে…
Awesome https://is.gd/tpjNyL