
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উত্তেজিত জনতার মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন মানুষকে হাত পা নাড়তে দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ফোনে কথা বলতেও। সিসিটিভিতে সেই ফুটেজ দেখে তাঁকে ধুলিয়ান পুরসভার চেয়ারম্যান বলে চিহ্নিত করেছেন ধুলিয়ানের মানুষজন। তাঁর নাম ইনজামামুল ইসলাম। গত ১১ এপ্রিলের গণ বিক্ষোভে তাঁকে একজন মদতদাতা বলে ঠাওরেছে জনতা। এমনকি ওইদিন পুলিশকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ইনজামামুল অবশ্য বলেছেন, তিনি বিক্ষোভ ঠেকাতে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গী ছিলেন দশ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলরের স্বামী শঙ্কর সরকার। কিন্তু রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস যখন জাফরাবাদ, বেতবোনায় আক্রান্ত মানুষজনের মুখোমুখি দাঁড়ালেন শনিবার দুপুরে, তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন ” চারঘন্টা দুষ্কৃতিরা তান্ডব চালানোর পর পুলিশ যখন আসে, তখন যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।” তাঁদের একাংশ তৃণমূলের পুরসভার চেয়ারম্যানের দিকেও অভিযোগের আঙুল ঘুরিয়েছেন জোড়া কমিশনের সদস্যদের কাছেও। রাজ্যপালও বলেছেন ” পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি মানুষের।”
জাতীয় মানবাধিকার ও জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা যখন মহিলাদের কাছে গিয়েছেন তাঁরা পরিস্কার নালিশ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। বলেছেন, ” পুলিশ কোনও কাজ করে না।” তাঁরা আতঙ্কিত জানিয়ে বলেছেন, ” বিএসএফ চলে গেলে আমাদের আবার আক্রমণ করবে। আমাদের বিএসএফ ক্যাম্প চাই। আমাদের গহনাগাটি, টাকা পয়সা সব লুট করেছে। আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলা করছে, বাড়ির পুরুষদের অত্যাচার করছে। আমরা মমতাদি’র পুলিশ চাই না। বিএসএফ ক্যাম্প চাই।” মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বললেন, ” ভয়ংকর, শিক্ষিত সমাজে বাস করে মানুষজন এতখানি ভয়ংকর হয় না। শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার জন্য একজন মানুষকে খুন করে ফেলা যায়, চারঘন্টা ধরে পুলিশ আসে না এটা হতে পারে না।”
শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলছেন ” বিজেপিই তো এসব করাচ্ছে। রাজ্যপালও বিজেপি’র লোক, কমিশনও বিজেপির লোক। ওরা তো বলবেই।” তাঁর দাবি, ” শমসেরগঞ্জ ক্ষত সারিয়ে ফের স্বাভাবিক হচ্ছে। যারা ঘর ছেড়ে, এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা ঘরে ফিরছেন। দোকানপাট খুলছে, সবকিছুই আবার স্বাভাবিক হচ্ছে।” কিন্তু ঘরছাড়াদের অভিযোগ তো তৃণমূলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই। আমিরুল বলেন, ” একটা সম্পূর্ণ ভিডিও দেখান যেখানে চেয়ারম্যান পুরো গন্ডগোল পাকিয়েছে দেখা যাচ্ছে ? দেখাতে পারবেন না। কারণ এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ষড়যন্ত্র করে ছড়ানো হচ্ছে।”
তাঁর আরও যুক্তি, ” বিজেপি’র যে সাংসদ এলাকায় না থেকে উস্কানিমুলক কথা বলছেন তার বেলায় হিংসা ছড়ায় না ? আমাদেরকে তো অনেক মানুষ বলছেন মুসলিমরা তাঁদের রক্ষা করেছে। তাহলে কোনটা ঠিক ধরব? কোনটা ভুল?” তিনি আরও বলেন, ” দুজন মানুষ উত্তেজিত হয়ে লাঠি হাতে একে অপরকে মারতে যাচ্ছে। আর আমি যদি একজনের হাতের লাঠি কেড়ে নিই মারামারি থামাতে আপনি সেই ছবি তুলে ছড়িয়ে দিয়ে বলবেন আমি হিংসা ছড়াচ্ছি, মারমারি করছি?” ফের বিজেপি’কে দোষ দিয়ে আমিরুল বলেন, ” আসলে হিন্দু আর মুসলিমে ভাগাভাগি করছে বিজেপি। ওরাই ষড়যন্ত্র করছে। এলাকার মানুষকে একসঙ্গে বাস করতে দিতে চাইছে না।”
কিন্তু এই ইনজামামুল ইসলাম অশান্তির আগে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন “অ্যালানে জং-য়ে” নামতে হবে। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তারপরেই একপ্রকার উত্তাল হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের উত্তর অংশ। বিধায়ক অবশ্য তা রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেই দেখছেন।
বিজেপি’র উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি সুবল চন্দ্র মণ্ডল অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তেই অনড়। বলছেন, ” বিজেপির কোনও ইচ্ছেই নেই বিভেদ ছড়ানোর। ওরা মদত দিয়ে হিংসা পাকিয়েছে। হিংসা ছড়িয়েছে। লুটপাট চালিয়ে হিন্দুদের ঘর ছাড়া করেছে।”